আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষ ও গালওয়ান উপত্যকার প্রসঙ্গে সেনা ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। যদিও আদালত তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মানহানির মামলার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখেছে। একটি ডিভিশন বেঞ্চ, যেখানে ছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি এজি মাসিহ, রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। সেই প্রেক্ষিতে 'ভারত জোড়ো যাত্রা' চলাকালীন রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার পর চীন প্রায় ২,০০০ বর্গকিমি ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে এবং মোদি সরকার কার্যত 'আত্মসমর্পণ' করেছে। এই মন্তব্য নিয়েই লখনউতে এক নির্বাচিত প্রতিনিধি সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাতেই এবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। রাহুল গান্ধীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।
আদালতের তীব্র প্রতিক্রিয়া:
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আপনি কীভাবে জানলেন চীন ২,০০০ বর্গকিমি ভারতীয় জমি দখল করেছে? আপনি যদি প্রকৃত ভারতীয় হন, তাহলে আপনি এ ধরনের মন্তব্য করবেন না। আপনি কী গালওয়ানে ছিলেন? আপনার কাছে কি কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রমাণ আছে?" যখন অভিষেক সিংভি যুক্তি দেন যে একজন বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর এমন প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে, তখন বিচারপতি দত্ত কড়া জবাব দেন: "তাহলে আপনি সংসদে এমন কথা বলুন, রাস্তায় নয়।"
অবশ্যই স্থগিতাদেশ ও নোটিশ জারি:
তবে, এই তীব্র ভর্ৎসনার মধ্যেও আদালত রাহুল গান্ধীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাটি খারিজ করেনি। বরং মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশের তরফে কোনও শুনানির সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বিচার গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে সিংভি যুক্তি দেন যে, এতে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হয়েছে। সেই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট মামলাটিতে স্থগিতাদেশ জারি করে এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সব পক্ষকে নোটিশ পাঠায়।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ:
উল্লেখ্য, এর আগে মে মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাহুল গান্ধীর একই আবেদন খারিজ করে দেয়। বিচারপতি সুব্রত বিদ্যার্থী রায় দেন, "মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানেই এই নয় যে কেউ সেনাবাহিনীকে অপমান করবে বা মানহানিকর মন্তব্য করবে।"
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
এই মামলার সূত্র ধরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও একবার তীব্র হয়েছে। কংগ্রেস দাবি করছে, সরকার সেনার নাম করে বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করতে চাইছে। অন্যদিকে, বিজেপি বলছে, "সেনার আত্মত্যাগ নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী।" সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ রাহুল গান্ধী এবং বিরোধী রাজনীতির পক্ষে একটি সতর্কবার্তা। যদিও আদালত এখনই মামলাটি বাতিল করেনি, তবে ভবিষ্যতে কী সিদ্ধান্ত আসে এবং আদালতের এই ভাষ্য রাজনৈতিকভাবে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
