সমীর দে, ঢাকা: বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই রবিবার বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৪টায় ভোগগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই গণণা শুরু হয়েছে। সন্ধে পর্যন্ত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ বিপুল জয়ের পথে রয়েছে। অধিকাংশ আসনেই আওয়ামী লিগের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। তবে এবার ব্যালট পেপারে ভোট হওয়ার কারণে গণনায় কিছুটা সময় লাগছে। অনেক আসনে আওয়ামি লিগের প্রার্থীকে পেছেনে ফেলে এগিয়ে গেছে আওয়ামি লিগের বিদ্রোহী বা সতন্ত্র প্রার্থী।

ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সারাদেশের তথ্য নিয়ে তিনি জেনেছেন প্রায় ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে কিছু কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাজধানী ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জে ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রতিপক্ষের হামলায় জিল্লুর রহমান (৪০) নামে এক নৌকা সমর্থক নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৭টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মরার কারণে স্থগিত করা হয়েছে। কয়েকজায়গায় নির্বাচনী কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই নির্বাচনে বিরোধীতা করে আসছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। তারা ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে দুই দিন ধরে হরতাল পালন করে আসছে। ট্রেন-বাসে আগুনসহ নানা ধরনের নাশকতার ঘটনাও ঘটেছে। আগুনে পুড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির এত বিরোধিতার পরও ৪০ শতাংশ মানুষের কেন্দ্রে আসাকে বিজয় বলেই উল্লেখ করেছেন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে জনগন এই নির্বাচন প্রত্যাক্ষান করেছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান।

অন্যদিকে দুইজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে। গাজীপুরে ভোট শুরুর মাত্র ২৫ মিনিট আগে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যু হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আবদুল করিম (৫৫)। এর কিছুক্ষন আগে ভোলার লালমোহনে স্ট্রোক করে মারা যান মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনে কোনও ধরনের সহিংসতা বা গুরুতর কোনও ঘটনা ঘটেনি। যখনই আমরা কোনও তথ্য পেয়েছি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
নির্বাচন শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামি লিগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানায় গিয়ে ওসি তোফায়েল আহমেদকে ধমকান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এর আগেও তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ ছিল।

রবিবার সকাল আটটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবার বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে ছিলেন ৪৩৬ জন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনের নিরাপত্তায় ৮ লাখেরও বেশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে সদরের মিরকাদিম এলাকায় ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রতিপক্ষের হামলায় জিল্লুর রহমান (৪০) নামে এক নৌকা সমর্থক নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, একই আসনের স্বতন্ত্র কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী মো. ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জেলা রিটার্নিং অফিসার মো. আবু জাফর রিপন বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তদন্ত করে সবাইকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

টাঙ্গাইল-২ আসনের গোপালপুরে ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপারসহ ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতিরা। এ সময় তাদের হামলায় দুই জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৫ রাউন্ড গুলি করেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের কাহেতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। এরপর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ফেনী-১ ও ৩ আসনে জাল ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ২২ জনকে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সন্ধে পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে আওয়ামি লিগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মোর্তজা, চিত্রনায়ক ফেরদৌসও জয়ের পথে রয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের থেকে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছেন।বাংলাদেশে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহন হয়েছে। নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট বন্ধ রয়েছে। সরকার গঠনের জন্য ১৫০টি আসন প্রয়োজন। সেখানে আওয়ামি লিগের প্রার্থীরা ২৫০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ফলে সরকার গঠনে আওয়ামি লিগের সামনে কোন বাধা নেই।