আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশে ফের এক মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনাট মান্ডি জেলার তালওয়ারা গ্রামে ঘটেছে। সূত্রে খবর ভয়াবহ দুর্যোগে মাত্র দশ মাসের শিশুকন্যা নীতিকা, তার গোটা পরিবার হারিয়েছে। দুর্যোগে এক নিমেষে সব শেষ। বাবা, মা এবং দিদাকে হারায় এই শিশু। ঘটনাটি ঘটে ৩০ জুন রাত ও ১ জুলাই ভোরের মাঝমাঝি সময়ে। সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যরাতে আচমকা বৃষ্টিজনিত কারণে বন্যার পরিস্থিতি তৈরী হয়৷ ঘটনার জেরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘিরে রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি৷
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নীতিকার বাবা রমেশ (৩১) বাড়িতে বন্যার জল ঢুকে যাওয়াতে তা আটকাতে যাচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রী রাধা দেবী (২৪) এবং মা পুর্নু দেবী (৫৯) তাঁর পিছু পিছু যান। দুর্ভাগ্যবশত, তাঁরা কেউই আর ফিরে আসেননি। নিমেষে জলের তোড়ে ভেসে যান পরিবার শুদ্ধ। পরে রমেশের দেহ উদ্ধার করা হলেও তাঁর স্ত্রী ও মায়ের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি বলেই জানিয়েছে পুলিশ৷
খবর মারফত জানা গিয়েছে, বন্যার সময় ছোট্ট নীতিকা একা বাড়ির ভিতরে কান্নাকাটি করছিল। পাশের বাড়ির বাসিন্দা প্রেম সিংহ শিশুটিকে দেখতে পেয়ে দ্রুত পরিবারের আর একজন সদস্য বলবন্তকে খবর দেন। বলবন্ত খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি আবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয় রাম ঠাকুরের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন।
নীতিকাকে বর্তমানে তার ফুফু (পিসি) কিরণা দেবী নিজের বাড়ি, শিকৌরি গ্রামে নিয়ে গিয়েছেন। সূত্র মারফত, এই গ্রাম দুর্ঘটনাস্থল তালওয়ারা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এহেন হৃদয়বিদারক ঘটনার পর হিমাচল প্রদেশ সরকার নীতিকাকে 'রাজ্যের শিশু' বলে ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ, এখন থেকে তার যত্ন, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা বা ব্যবসা শুরু করার সমস্ত দায়িত্ব সরকার নিজেই নেবে। তাকে 'মুখ্যমন্ত্রী সুখ-আশ্রয় যোজনা'র আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, এটি ২০২৩ সালে শুরু হয়। এই যোজনার মাধ্যমে অনাথ শিশুদের জন্য খাবার, পোশাক, শিক্ষা, বাসস্থান এবং ভবিষ্যতের জীবনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সাহায্য প্রদান করা হয়।
এই সহায়তা শিশুটির ২৭ বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানা গিয়েছে৷ যদি শিশু অবিবাহিতা থাকে, চাকরি না পায় বা থাকার জায়গার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও উৎসব ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি এবং ভবিষ্যতে ঘর তৈরির জন্য আর্থিক সাহায্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই প্রকল্পে।
রাজস্বমন্ত্রী জগত সিংহ নেগি সংবাদমাধ্যমে একরকম বার্তা দিয়ে বলেন, ' নীতিকা যা'ই হতে চায়, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, অথবা অফিসার, সরকার তার পাশে সবসময় থাকবে এবং সর্বতোভাবে সাহায্য করবে।'
খবর অনুযায়ী, রাজ্যের বারোটি জেলার মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে সাতটিতে ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য 'হলুদ' সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত শুক্রবার পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রায় ২০৮টি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৭টি মান্ডিতেই। বর্তমানে যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একাধিক রাস্তা। রাজ্য জরুরি অপারেশন সেন্টার (SEOC) অনুসারে, ৭৪৫টি জল সরবরাহ প্রকল্প এবং আরও ১৩৯টি বিদ্যুৎ বিতরণ ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
