আজকাল ওয়েবডেস্ক: গতবছরের আগস্ট মাসে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার গ্রাহাম থর্প। তাঁর মৃত্য়ুর তদন্তে নামার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক হৃদয় বিদারক কাহিনি।
মৃত্য়ুর আগে থর্প তাঁর স্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, সুইজারল্যান্ডের একটি ক্লিনিকে তাঁকে মৃত্যুবরণে যেন সাহায্য করা হয়। তাঁর পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয় থর্প আত্মহত্যা করেছেন।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব হারানোর পর থেকেই থর্প মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। একসময়ের নামী এক ক্রিকেটারের এহেন পরিণতিতে শোকাহত ক্রিকেটবিশ্ব। গতিদানবদের স্লেজিং উপেক্ষা করেও যিনি উইকেটে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকতেন, তাঁর হঠাৎ কী হল যে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন? থর্পের মৃত্য নিয়ে চলছে তদন্ত।
সারের একটি আদালতে তদন্তের শুনানিতে বলা হয়, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব চলে যাওয়ার পরে মানসিক দিক থেকে তিনি ভেঙে পড়েন। তিনি একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন।
আরও পড়ুন: ভারতীয় ফুটবলকে বাঁচাতে আসছেন এই কোচ, ফেডারেশনের সমর্থন তাঁর দিকেই
তবে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বের পরেই যে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন, তা নয়। ২০১৮ সাল থেকেই থর্প মানসিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েন।
তবুও কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। থর্পের স্ত্রী আমান্ডা থর্প জানান, অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ চলাকালীন একটি বিতর্কিত ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে পুরোদস্তুর ভেঙে পড়েন থর্প।
অস্ট্রেলিয়া থেকে ঘুরে আসার পরে থর্প আরও ভেঙে পড়েন। যে ভিডিওটি থর্পকে ভিতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিল, তাতে দেখানো হয়, তাসমানিয়ার পুলিশ ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট, জিমি অ্যান্ডারসন ও অস্ট্রেলিয়ার নাথান লিয়ঁ, অ্যালেক্স ক্যারি এবং ট্র্যাভিস হেডের একটি পানীয় সেশনে বাধা দেয়।
ভিডিওটি থর্প নিজেই করেন এবং সেই সময়ে থর্পকে বলতে শোনা গিয়েছিল, 'আইনজীবীদের জন্য ভিডিও করছি।' অনেকেই মনে করেন, সেই সময়ে থর্প ঘরের ভিতরে সিগার খাচ্ছিলেন, যা তাসমানিয়ার নিয়মের বিরুদ্ধে। সেই কারণে পুলিশ এসেছিল।
এই ভিডিওটিই ছড়িয়ে পড়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ মাধ্য়মে প্রকাশিত হয়েছিল। অ্যাশেজে ইংল্যান্ড বিধ্বস্ত হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সেই সিরিজের ফলাফল হয়েছিল ৪-০। ইংল্যান্ড বিপর্যস্ত হওয়ার পরে ব্যাটিং কোচের চাকরি হারান থর্প। তার পর থেকেই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে শুরু করে। মানসিক দিক থেকে থর্প বিধ্বস্ত হন। আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা। ক্রমে তাঁর মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা গ্রাস করতে থাকে।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকার স্ত্রী আমান্ডা বলেন, ''মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে থর্প আমাকে বলত, ও আর বাঁচতে চায় না। আমার কাছে অনুরোধ করেছিল সুইজারল্যান্ডের একটি ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করতে যেন সাহায্য করা হয়।''

গত বছরের ৪ আগস্ট থর্প মারা যান। তাঁর স্ত্রী ভেবেছিলেন কুকুর সঙ্গে নিয়ে তিনি বোধহয় বেরিয়েছেন। কিন্তু থর্প আর ফেরেননি। ইংল্যান্ডের এই তারকা ক্রিকেটার ১০০টি টেস্ট খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ১৬টি সেঞ্চুরি করেন। ৮২টি ওয়ানডে খেলেন গ্রাহাম থর্প।
অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ খেলতে গিয়ে তাঁর বিতর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই থর্প ভেঙে পড়েন। কোনও কিছুই ঠিকঠাক চলছিল না। অবসাদ থাবা বসায়। শেষ পর্যন্ত থর্প চলেই গেলেন।
আরও পড়ুন: ডার্বির আঁচ গায়ে মাখতে চান, কেন বাকি ক্লাবের প্রস্তাব ফিরিয়ে চার বছরের চুক্তিতে মোহনবাগানে অভিষেক?
