কৃশানু মজুমদার: ভারতের তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলির জার্সির নম্বর ১৮। ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাবাকে হারান কোহলি। সেই সময় বিরাটের বয়স ছিল ১৮। বিরাটের পিঠে জ্বলজ্বল করা ১৮ তাই নেহাত কোনও সংখ্যা নয়। আবেগ, ভালবাসা, শ্রদ্ধার নম্বর ওই ১৮।
১৬ নম্বর জার্সি পরে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আগলাতেন গুরবিন্দর সিং। লাল-হলুদ সমর্থকরা আদর করে তাঁকে ডাকতেন 'গুরি পাঁজি'। গুরবিন্দর বলতেন, "ষোলা মে সুখ, ষোলা মে দুখ হে মেরা।" ইস্টবেঙ্গল স্টপারের বাবা প্রয়াত হয়েছিলেন ১৬ মার্চ। আর গুরবিন্দরের জন্ম তারিখ ১৬ এপ্রিল। তাই ১৬ নম্বর জার্সি পরতেন পঞ্জাবতনয়।

ইস্টবেঙ্গলের নবাগত মহম্মদ রশিদের পিঠে উঠছে ৭৪ নম্বর জার্সি। প্যালেস্টাইনের এই ফুটবলার লড়াকু যোদ্ধা। তিনি নিজেই একসময়ে বলেছিলেন, ''অসম্ভব বলে কোনও শব্দ প্যালেস্তিনীয়দের অভিধানে নেই। জন্ম থেকেই আমরা যোদ্ধা।'' সেই রশিদ এবার লাল-হলুদের মাঝমাঠ আগলাবেন।
আরও পড়ুন: বারবার চোট পাচ্ছেন আকাশ, নীতীশরা, সমাধান বাতলে দিলেন মাহি
জাতীয় দলের হয়ে তিনি ৩ নম্বর জার্সি পরেন। লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবে তাঁর জার্সির নম্বর ৭৪। কিন্তু কেন? সূত্র অনুযায়ী, রশিদের বাবার জন্ম-মাস ৭। অর্থাৎ জুলাই। আর মায়ের জন্ম-মাস ৪। অর্থাৎ এপ্রিল।
লাল-হলুদে রশিদের ৭৪ নম্বর জার্সিতে রয়েছেন তাঁর বাবা-মায়ের ছোঁয়া। ৭ থেকে ৪ বিয়োগ করলে হয় তিন। রশিদের জন্মদিন আবার ৩ জুলাই। সেই কারণে প্যালেস্তাইন জাতীয় দলে রশিদ ৩ নম্বর জার্সি পরে খেলেন। বাবা-মা-কে শ্রদ্ধা জানিয়ে রশিদ ৭৪ নম্বর জার্সি নিয়েছেন লাল-হলুদে।

বেশ কয়েকবছর আগের কথা। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার মজিদ বিশকর ক্লাবের আমন্ত্রণে পা রাখেন কলকাতায়। ক্লাব তাঁবুতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক বৈঠকে জামশেদ নাসিরিকে সঙ্গে নিয়ে মজিদ ফাঁস করলেন লাল-হলুদে তাঁর ১২ জার্সি পরার রহস্য। 'বোহেমিয়ান বাদশা' বলছিলেন, ''আমি ১২ নম্বর জার্সি নিই ইস্টবেঙ্গলে। জামশেদ নেয় ৯ নম্বর জার্সি। খাবাজি কিছুতেই নিজের জার্সির নম্বর ঠিক করতে পারছিল না। ১২ আর ৯ যোগ করলে হয় ২১। খাবাজি নিল ২১ নম্বর জার্সি।''
এ তো গেল মজিদের সময়ের কথা। সময় তো আর থমকে নেই। এই ২০২৫-এ ইস্টবেঙ্গল নতুন মরশুমের জন্য দল গড়েছে। অস্কার ব্রজোঁর দলের অনুশীলন দেখার জন্য মাঠে ভিড় হচ্ছে। রশিদ, মিগুয়েল, কেভিন সিবিয়েদের নিয়ে চর্চা চলছে। তাঁদের নামে স্লোগান উঠছে। এই আবহে ডুরান্ড কাপে বুধবার অভিযান শুরু করছে ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদের প্রতিপক্ষ সাউথ ইউনাইটেড। প্রিয় ক্লাবের মাঠে নামার অপেক্ষায় সমর্থকরা।

রশিদও অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন। তাঁর ৭৪ নম্বর জার্সির পিছনে লেখা বাসিম রশিদ। প্যালেস্তাইনের তারকা ফুটবলারের নাম মহম্মদ বাসিম আহমেদ রশিদ। সূত্র অনুযায়ী, রশিদের বাবার নাম বাসিম। সেই কারণে জার্সিতে রশিদের সঙ্গে লেখা তাঁর বাবার নামও।
প্যালেস্তাইনের রাস্তায় ফুটবল খেলে বড় হয়ে ওঠা। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত রশিদ ছিলেন সেখানে। রাস্তায় ফুটবল খেলেই কেটেছে শৈশব। এখন রশিদ নতুন দেশে। বিভিন্ন দেশের ক্লাবের হয়ে খেলে সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর কেরিয়ার।
প্রথমে তিনি ছিলেন স্ট্রাইকার। পরে সেন্টার ব্যাক পজিশনে খেলেন। সৌদি আরবে আবার তাঁর পজিশন বদলায়। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছিলেন। পরে আবার তাঁকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলানো হয়। অস্কারের দলে তিনি মাঝমাঠের জেনারেল হবেন ব্রাজিলীয় মিগুয়েলের সঙ্গে। ওই ৭৪ নম্বর আশ্বস্ত করবে ভক্তদের, ৭৪ নম্বরের পায়েই ফুটবে ফুল। এখন থেকেই স্বপ্ন দেখছেন ইস্টবেঙ্গল ভক্ত-সমর্থকরা।
আরও পড়ুন: বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট, কেমন থাকবে ম্যাঞ্চেস্টারের আবহাওয়া জানুন
