আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগ ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তবে এর মধ্যেও ঘটে গিয়েছে এক অবাক করার মতো বিষয়। জানা গিয়েছে, সোমবার পদত্যাগের ঠিক ১০ দিন আগে নিজের অবসর নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ধনখড়। জানা গিয়েছে, তিনি নিজেই বলেছিলেন, তিনি ‘উপযুক্ত সময়ে’, অর্থাৎ ২০২৭ সালের আগস্ট মাসে অবসর নেবেন’। তবে সঙ্গে একটি সতর্কবাণীও দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘যদি না ঈশ্বর ভিন্ন কিছু চান’। জানা গিয়েছে, গত ১০ জুলাই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ধনখড় বলেছিলেন, ‘আমি উপযুক্ত সময়েই, অর্থাৎ ২০২৭ সালের আগস্ট মাসে অবসর নেব, যদি না ঈশ্বর ভিন্ন কিছু চান’। কিন্তু নিজের এই বক্তব্যের মাত্র ১০ দিনের মাথায়, তিনি সবাইকে চমকে দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা করেন।

নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে ধনখড় বলেন, তিনি এখন স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধনখড়ের এই পদত্যাগে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপে দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে অবসরের ঘোষণা করেন ধনখড়। শারীরিক অসুস্থতার জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল। ২০২২ সালে আগস্ট মাসে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন জগদীপ ধনখড়। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে ৩৪৬ ভোটে হারিয়ে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তিনি। সোমবারও রাজ্যসভায় অধ্যক্ষ হিসাবে অধিবেশন পরিচালনা করেন ধনখড়।

আরও পড়ুন: ধনখড়ের হঠাৎ ইস্তফা! জানেন কি, এর আগে কারা মাঝপথেই ছেড়েছিলেন উপরাষ্ট্রপতির পদ?

আর সোমবার রাতেই ইস্তফার কথা জানান তিনি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে নিজের স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করেছেন ধনখড়। চিঠিতে লিখেছেন, পরামর্শ মেনে নিজের স্বাস্থ্যে নজর দেওয়ার জন্যই উপরাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। দায়িত্বে থাকাকালীন কীভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সমর্থন পেয়েছেন, সে কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ধনখড়। তিনি লিখেছেন, ‘যে আন্তরিকতা পেয়েছি, যেভাবে আমার উপর আস্থা রাখা হয়েছে, তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’ রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে ধনখড় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যের কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শেই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ধনখড়।

তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মেয়াদকালে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা, সমর্থনের এবং দায়িত্বপালন করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন। ৭৪ বছর বয়সি ধনখড় আরও জানান, উপরাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি ভারতের অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছেন। এই উন্নয়নে যোগদান করতে পেরে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন বলে জানিয়েছেন ধনখড়। ২০২২ সালে আগস্ট মাসে উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন জগদীপ ধনখড়। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে ৩৪৬ ভোটে হারিয়ে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তিনি। সোমবারও রাজ্যসভায় অধ্যক্ষ হিসাবে অধিবেশন পরিচালনা করেন ধনখড়। আর রাতেই ইস্তফার কথা জানান তিনি।

১৯৫১ সালের ১৮ মে রাজস্থানের ঝুনঝুনুতে জন্ম ধনখড়ের। ছিলেন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মাত্র ৩৪৬ ভোটে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে তিনি পরাজিত করেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। গত মার্চ মাসে ৭৩ বছরের ধনখড়কে বুকে ব্যথা নিয়ে দিল্লির এইমসে ভর্তি করানো হয়। শুধু তাই নয়, গত মাসে কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আচমকা অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে সোমবার সকালে সংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে রাজ্যসভার অধ্যক্ষের আসনে বসে কাজ করেছেন ধনখড়। কিন্তু রাতেই আচমকা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।