আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছত্রিশগড়ের অভুজমাড়ের জঙ্গলে ফের একবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ছয়জন মাওবাদী নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনই মহিলা। নিহতরা সিপিআই (মাওবাদী)-র সবচেয়ে যুদ্ধ-সক্ষম ইউনিট 'পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (পিএলজিএ)'-র ব্যাটালিয়ন ওয়ানের সদস্য ছিলেন। ঘটনাটি বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে, যখন নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলির পর তারা মারা যায়। এই এনকাউন্টারটি ঘটেছে সেই একই অঞ্চলে যেখানে মে মাসে মাওবাদী শীর্ষনেতা নাম্বালা কেশব রাও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘স্টিক অ্যান্ড ক্যারট’ কৌশলের ফলে গত বছর থেকেই একের পর এক বড়সড় ধাক্কা খাচ্ছে মাওবাদী সংগঠনটি।
বস্তার রেঞ্জের আইজি সুন্দররাজ পি জানিয়েছেন, নিহত মাওবাদীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাটালিয়ন ওয়ানের কমান্ডার ও বস্তার ডিভিশনাল কমিটির সদস্য রাহুল পুনেম ওরফে লাচ্চু পুনেম। আরও নিহতদের মধ্যে আছেন উঙ্গি টাটি, মনীষা, টাটি মীনা ওরফে ছোটি, হরিশ ও কুদাম বুধরি। তাদের কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, একটি স্ব-লোডিং রাইফেল এবং অন্যান্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। নরায়ণপুর জেলার পুলিশ সুপার রবিনসন গুরিয়া জানান, ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় অভুজমাড় অঞ্চলের পারিয়া-কাকুর জঙ্গলে মাওবাদীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে জেলা রিজার্ভ গার্ড, স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ও বিএসএফ-এর যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। ১৮ জুলাই দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।
এনকাউন্টারটি মাওবাদীদের 'শহীদ সপ্তাহ' পালনের ঠিক কয়েকদিন আগেই ঘটেছে, যা প্রতিবছর ২৮ জুলাই থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে পালন করা হয়। দলটি এ উপলক্ষে একটি প্রেসনোট এবং ২৪ পাতার একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে, যেখানে বস্তারকে "দণ্ডকারণ্যের কেন্দ্রবিন্দু" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত বস্তার অঞ্চলে ২০৪ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে সিপিআই (মাওবাদী)-র দাবি, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া 'অপারেশন কাগার'-এ ৩৫৭ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৩৬ জন মহিলা এবং চারজন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই সম্প্রতি জানিয়েছেন, গত ১৫ মাসে ১৫২১ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। গড়ে প্রতিদিন তিনজন আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি একে “আস্থা ও উন্নয়নের জয়” বলে বর্ণনা করেছেন। এদিকে ছত্রিশগড়ে সংঘর্ষের কারণে তেলেঙ্গানাতেও আত্মসমর্পণের হার বেড়েছে। তেলেঙ্গানা রাজ্যে এই বছর ৩৯০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। সম্প্রতি ছত্রিশগড়ের শীর্ষ মাওবাদী দম্পতি লাচ্ছন্না ও অরুণা তেলেঙ্গানার রামাগুণ্ডমে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
আরও এক দম্পতি, সঞ্জীব ও তার স্ত্রী পার্বতী, রাচাকোন্ডার পুলিশ কমিশনারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। সঞ্জীব ছিলেন 'জন নাট্য মণ্ডলী'-র সদস্য এবং প্রয়াত গদরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। গানে-নাচে জনগণকে দলে টানাই ছিল তাঁদের কাজ। রাজ্য সরকার আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসনের জন্য ৫০,০০০ টাকা করে অনুদান ও অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে। পুলিশের মতে, এই পদক্ষেপগুলি মাওবাদী আন্দোলনের ভিত্তিকে ক্রমাগত দুর্বল করে তুলছে।
