আজকাল ওয়েবডেস্ক: দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এখন অম্ল-মধুর। শশী থারুরকে গিলতে বা উগরোগে হিমশিম অবস্থা কংগ্রেসের। এসবের মধ্যেই ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ। কেরলের কোচিতে শশী থারুর ‘শান্তি, সম্প্রীতি ও জাতীয় উন্নয়ন’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানেই তিনি বলেন, "আপনার প্রথম আনুগত্য কার প্রতি হওয়া উচিত? আমার মতে, দেশই প্রথম। রাজনৈতিক দল আসলে একটা মাধ্যম মাত্র, যার সাহায্যে আমরা দেশকে আরও উন্নত করতে পারি। দেশের উন্নয়নের পথে প্রত্যেক দলেরই নিজস্ব ভাবনা আছে এবং তারা তাতে দ্বিমত পোষণ করতেই পারে। তবে, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলির সহযোগিতা জরুরি।'

সম্প্রতি 'অপারেশন সিঁদুর' নিয়ে গেরুয়া শিবিরের নানা মন্তব্যের ও সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। এ জন্য হাত শিবিরের অন্দরেই  প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই বর্ষীয়ান নেতা। এ দিন তারও জবাব দেন তিনি। বলেন, "অনেকেই আমার সমালোচনা করছেন, কারণ আমি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। দেশের ভেতরে এবং সীমান্তে সম্প্রতি যা ঘটেছে, সেই প্রেক্ষিতে আমি মনে করি, এটাই দেশের পক্ষে ঠিক সিদ্ধান্ত। তাই আমি নিজের অবস্থানে অনড় থাকব।"

শনিবারের অনুষ্ঠানে এক ছাত্র তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে থারুর জানান, তাঁর মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা দলের মূল্যবোধ এবং আদর্শকে শ্রদ্ধা করেন এবং সেই কারণেই দলে রয়েছেন। কিন্তু, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য দলের সঙ্গে সহযোগিতা করাও জরুরি। অনেক সময় দল এই ধরনের অবস্থানকে অবিশ্বাস্য বা বিরোধিতা বলে ধরে নেয়। এখানেই মূল সমস্যার সূত্রপাত।

কংগ্রেস নেতা শশী তাঁর দলের নেতাদের তাঁকে লক্ষ্য করে করা মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত হোক বা অন্যভাবে হোক, যেকোনও গণতন্ত্রে রাজনীতি হল প্রতিযোগিতা। আর ফলস্বরূপ, যখন আমার মতো মানুষ বলে যে- আমরা আমাদের দলগুলোকে সম্মান করি, তখন আমাদের কিছু মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস থাকে, যা আমাদের দলে রাখে, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের অন্যান্য দলের সঙ্গে সহযোগিতা করা প্রয়োজন - আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন - কখনও কখনও দলগুলি মনে করে যে এটি তাদের প্রতি আনুগত্যহীন। এবং এটিই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়"

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 19, 2025

এরপরই তিনি বলেন, "আপনার প্রথম আনুগত্য কোনটি? আমার মনে হয়, দেশ প্রথমে আসে। দলগুলি জাতিকে উন্নত করার একটি মাধ্যম। তাই আমার মনে হয়, আপনি যে দলেরই হোন না কেন, সেই দলের উদ্দেশ্য হল নিজস্ব উপায়ে একটি উন্নত ভারত তৈরি করা। উন্নত ভারত তৈরির সর্বোত্তম উপায় সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, ধরুন, আরও পুঁজিবাদ। কেউ কেউ আরও সমাজতন্ত্র বলতে পারেন। কেউ কেউ নির্দিষ্ট ধরণের নিয়ন্ত্রণের পক্ষে হতে পারেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে হতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। এটা ঠিক আছে। কিন্তু পরিশেষে, আমাদের সকলকে একটি উন্নত ভারতের প্রতি, একটি নিরাপদ ভারতের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। এমন একটি ভারত গড়তে হবে যার সীমান্ত সুরক্ষিত, ভূখণ্ড নিরাপদ, জনগণের মঙ্গল লালন করা যেতে পারে। এবং এটাই আমার অঙ্গীকার।"

আরও পড়়ুন-  মাথাব্যথা বাড়ল দিল্লির! সীমান্তের কাছেই ব্রহ্মপুত্রের উপর মেগা নদীবাঁধ তৈরির কাজ শুরু করল চীন

শশী থারুর বলেন, "যদি আমরা সেই আদর্শে বিশ্বাসী হই, তাহলে সেই ধরণের চেতনা সকল দলের অতিক্রম করা উচিত, কেবল দ্বিদলীয় নয় বরং বহুদলীয়। আপনি সংসদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আজ আমাদের সংসদে, ৪৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এমন কিছু বিষয় থাকতে হবে যেখানে তারা সকলেই একমত হয়। এটি অবশ্যই আমার আবেগপূর্ণ দৃঢ় বিশ্বাস। তবে এটা সহজ নয়।" 

পরে সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে শশীর বার্তা, তাঁর রাজনৈতিক পথচলার মূল দর্শন বরাবরই 'নেশন ফার্স্ট' অর্থাৎ দেশ সবার আগে। বিদেশে চাকরি ছেড়ে শুধুমাত্র দেশের সেবা করার উদ্দেশ্যেই তিনি ফিরেছিলেন। রাজনীতির মাধ্যমে হোক বা বাইরে থেকে, তিনি সেই কাজই করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।