বলিউডে এক সময় যাঁর গানে প্রেমে পড়েছে গোটা দেশ—‘চাঁদ সিফারিশ’, ‘আও মিলো চলে’, ‘ও লড়কি হ্যায় কহাঁ’—সেই শানকেই আজকের প্রজন্ম চেনে এক ভিন্ন পরিচয়ে। প্লেব্যাক শিল্পী নয়, তিনি আজ সোশ্যাল মিডিয়ার ‘অ্যাবিউজার আঙ্কেল’। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি এই সত্যিটা মেনে নিলেন গায়ক নিজেই।
ঘটনাটি ২০২০ সালের। কোভিড-লকডাউনের সেইসব দিনে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ইনস্টাগ্রামে লাইভে এসেছিলেন শান। দর্শকদের কমেন্ট পড়তে পড়তে, হঠাৎই পড়ে ফেলেন একের পর এক অশ্লীল ও কুরুচিকর মন্তব্য। কিন্তু তখনও তিনি বুঝতেই পারেননি কী পড়ছেন। কারণ চশমা ছাড়া স্ক্রিনের লেখা পড়ছিলেন—সেই অন্ধবিশ্বাসে এগোতেই লাইভে মুখে উচ্চারণ করে ফেলেন একাধিক অশ্লীল গালিগালাজ!
শান বলেন, “চশমা ছাড়াই কমেন্ট পড়ছিলাম। বুঝিনি যে মানুষ গালাগালি করছে। আমি একের পর এক পড়েই যাচ্ছিলাম। পরে যখন চোখে পড়ে কী পড়েছি, নিজেই অবাক। বলি—‘এসব কী লেখা? আর কারা-ই বা এসব লিখেছে? একটুসম্মান ও কি আশা করা যায় না!’”
 
 তবে দেরি হয়ে গিয়েছিল। একজন ইউজার স্ক্রিনরেকর্ড করে সেই পুরো ক্লিপ ভাইরাল করে দেন। শান লাইভে হতাশ মুখে যে প্রতিবাদ করেছিলেন, তাতেও চূড়ান্ত ট্রোলিং বন্ধ হয়নি। বরং ধীরে ধীরে মিম হয়ে সেই ক্লিপই হয়ে ওঠে নতুন পরিচয়।
গায়কের কথায়, “এই ভিডিওটাই আমার পরিচয় হয়ে গিয়েছে! আমার ছেলেদের বন্ধুরা বলে, ‘আরে, এটাই তো তোর বাবা?’, তারপর মিম খুলে দেখায়। ওরা জানেই না আমি গান গাই! কোভিডে অদ্ভুত সব জিনিস ঘটেছে!”
এমন একজন শিল্পী, যিনি বছরের পর বছর প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জমি তৈরি করেছিলেন, তিনিও রেহাই পাননি সোশ্যাল মিডিয়ার অন্ধকার দিক থেকে। তিনি বলেন, “আমি জনপ্রিয় হতে চাই না এমন মানুষের কাছে, যারা এইরকম ভাষা ব্যবহার করে।”
তাঁর সেই ইনস্টাগ্রাম লাইভের ভিডিও Reddit-সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই শিল্পীর হয়ে কথা বলেন, বলেন, “ভীষণ মিষ্টি একজন তারকা শান”— আবার কেউ লেখেন, “ইন্টারনেট সস্তা হলে এইসবই তো হবে.” কিন্তু তাতে কি থেমেছে ট্রোলিং? বরং নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ক্লিপই হয়ে উঠেছে পরিচয়ের একমাত্র মাধ্যম।
এই ঘটনাই আবার একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—একজন শিল্পীর পরিশ্রম, জনপ্রিয়তা বা অতীত সাফল্য, সোশ্যাল মিডিয়ার এক ভাইরাল মিমে কখনও কখনও বিলীন হয়ে যেতে কতখানি সময় লাগে! আর শানের মতো সোজাসাপ্টা মানুষের কাছে, এই অভিজ্ঞতা শুধু অপমানজনক নয়, নিজের প্রতি সম্মান হারানোরও সমান।
প্রসঙ্গত, শানের গান মন ভোলায় শ্রোতাদের। শানের গান মানেই কখনও মন কেমন, কখনও হুল্লোড়। এবার তাঁর পথ অনুসরণ করে বলিউডে অভিষেক হতে চলেছে গায়কের ছেলে মাহির। ইব্রাহিম-খুশির 'নাদানিয়া' ছবিতে 'তেরা কেয়া কারু' গানটি গেয়েছেন মাহি। এবার বাবার পথ অনুসরণ করে সুরে সুরে তাঁর মন জয় করার পালা।
