আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার তদন্তে এনআইএ ক্রমশ গতি পাচ্ছে। জঙ্গিদের দুই আশ্রয়দাতা, পারভেজ আহমেদ এবং বশির আহমেদকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এখন একজন স্থানীয় সাক্ষীকে শনাক্ত করেছে যিনি জঙ্গিদের পালানোর সময় দেখেছিলেন। এনআইয়ের এক তদন্তকারীর আধিকারিক জানিয়েছেন, “জঙ্গিরা সম্ভবত কাউকে সাহায্য করতে বাধা দেওয়ার জন্য শূন্যে গুলি চালায়। এই সময় প্রত্যক্ষদর্শী তাদের দেখে ফেলেন।“

এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত চলাকালীন বৈসরণের যেখানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল সেখান থেকে কার্তুজের খোল উদ্ধার করা হয়েছে। যা প্রমাণ করে প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের সত্যতা। এএনাই জানিয়েছে, ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তাঁকে কলমা পাঠ করতে বলা হয়েছিল এবং সম্ভবত তাঁকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল কারণ জঙ্গিরা তাঁর উচ্চারণে নিশ্চিত হয়েছিল যে সে স্থানীয় বাসিন্দা। বেঁচে যাওয়া অনেক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে জঙ্গিরা বৈসরণে ২৬ জনকে হত্যা করার আগে ধর্ম বাছাইয়ের জন্য কলমা পাঠ করিয়েছিল।

আরও পড়ুন: ভারতীয় রুপির প্রতীক তৈরি করেছিলেন কারা? একজনকে মনে রাখেনি কেউ

তদন্তকারীর প্রত্যক্ষদর্শী এবং আশ্রয়দাতাদের সাক্ষ্য যাচাই করে জঙ্গিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এএনআই জানিয়েছে, তিনজন সন্দেহভাজনের মধ্যে একজনকে হাশিম মুসা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। যিনি পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাবাহিনীর নিয়মিত সদস্য। মুসাকে সোনমার্গ জেড মোধ টানেল হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। যে হামলার ফলে ছয় শ্রমিক এবং একজন ডাক্তার নিহত হয়েছিলেন।

তদন্তকারী সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “অন্য দু’জনের পূর্ববর্তী কোনও সন্ত্রাসের রেকর্ড নেই এবং মনে করা হচ্ছে তাঁরা সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে আক্রমণের জন্যই ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল।“

এএনআই আশ্রয়দাতা, পারভেজ আহমেদ এবং বশির আহমেদের কোনও পূর্ববর্তী সন্ত্রাসের রেকর্ডও খুঁজে পায়নি। তদন্তকারীদের সন্দেহ, স্থানীয় কাশ্মীরি জঙ্গি বা পরিচিত ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স (OGW)দের নিয়ে একটি নতুন মডিউল তৈরি করার জন্য এটি পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ইচ্ছাকৃত কৌশল। কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে এটি উচ্চস্তরের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য করা হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়েছিল যে তিন থেকে পাঁচজন সন্ত্রাসী বৈসরণ উপত্যকার হামলা চালিয়েছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত, এনআইএ তিনজন লস্কর-ই-তৈয়বা জঙ্গিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। যাঁরা সকলেই পাকিস্তানি নাগরিক।

আরও পড়ুন: সিনেমা হলে দর্শক টানতে উদ্যোগী সিদ্দারামাইয়া, টিকিটের দাম বেঁধে দিল কর্ণাটক সরকার

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল লস্কর ই তইবার শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ)।এই ঘটনার তদন্তে নামে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা, গোয়েন্দা বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। তদন্তে দেখা গিয়েছিল, বহু আগে থেকেই এই পরিকল্পনার ছক কষা হয়েছিল। হামলাকারী জঙ্গিরা আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছিল। তাঁদের কাছে বিশেষ প্রশিক্ষণ ছিল। হামলার পর কোন পথে পালিয়ে যেতে হবে সেটাও তারা আগে থেকেই জানত। পরে তদন্তের দায়িত্ব নেয় এনআইএ। 

হামলার প্রতিবাদে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে দেয় ভারত। এছাড়াও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা কেড়ে নেওয়া হয়। জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাতে পাল্টা ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালায় ভারত। ভারতীয় সশস্ত্র সেনা পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে)-এর ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। সেনার তরফ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলার লক্ষ্য ছিল শুধু জঙ্গি ঘাঁটিগুলিই। এই হামলায় ১০০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছিল। 

ভারতের অভিযানের পাল্টা হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানও। ড্রোন, মিসাইলের সেই হামলাগুলি সফলভাবে প্রতিহত করেছিল ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অবশেষে দুই দেশ ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মতি জানায়।