আজকাল ওয়েবডেস্ক:  আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির জটিল প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের মধ্যে খোলামেলা সংলাপের আহ্বান জানালেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। সোমবার চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর সঙ্গে বৈঠকে বসেন জয়শঙ্কর। সফরকালীন তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, এই সফর সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির ধারা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

চীনের তিয়েনচিন শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)–এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিতে এসেছেন জয়শঙ্কর। সফরের শুরুতেই তিনি চীনের SCO সভাপতিত্বকে সফল করার জন্য ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান। পাশাপাশি, গত অক্টোবরে কাজানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠকের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে উন্নতি ঘটেছে, তা তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেন।

জয়শঙ্করের কথায়, “আমার বিশ্বাস, এই সফর আমাদের ইতিবাচক অগ্রগতিকে বজায় রাখবে। আমরা সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করেছি। পাশাপাশি কৈলাস মানসরোবর যাত্রা পুনরায় চালু ভারতবাসীর মধ্যে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে। আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা পারস্পরিক উপকারে আসতে পারে।”

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ফিরছেন ভারতীয় নভোচারী শুভাংশু শুক্লা 

২০২০ সালের মে মাসে লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হন। এর জেরে দুই দেশের সম্পর্ক কার্যত জমে গিয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ডেমচক ও ডেপসাং এলাকায় সেনা অপসারণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এরপর ২৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে কাজানে মোদী ও শি-এর বৈঠক নতুন সম্পর্ক গঠনের পথ খুলে দেয়। সেই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পুরনো মেকানিজমগুলি পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চীনে এই প্রথম সফরে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা যখন এখানে সাক্ষাৎ করছি, তখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। প্রতিবেশী ও বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির খোলামেলা আদানপ্রদান একান্ত জরুরি।”

চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাই যে ভারতের লক্ষ্য, তা স্পষ্ট করলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফর ভারতের ‘চীন-পলিসি’-তে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে। জয়শঙ্কর সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর সভাপতিত্বে চীনের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথাও জানান।

বেইজিংয়ে চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে, জয়শঙ্কর তিয়েনচিনে অনুষ্ঠিত SCO-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেবেন। সিঙ্গাপুর থেকে চীন সফরে আসেন তিনি, যেখানে রবিবার সেদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করেন। বর্তমানে ভারত ও চীন নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

জয়শঙ্কর চীন সফরের আগে নয়াদিল্লিতে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, তিব্বত সংক্রান্ত বিষয়, বিশেষ করে দালাই লামার পুনর্জন্মের প্রশ্ন, ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি "কাঁটা" হয়ে রয়েছে। এই মন্তব্য আসে সেই সময়ে, যখন দালাই লামা ঘোষণা করেন যে তাঁর পুনর্জন্ম স্বীকৃতি দেওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টেরই থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী জয়শঙ্কর সোমবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। জয়শঙ্কর সিঙ্গাপুর থেকে চীনে এসেছেন তাঁর দুই-দেশ সফরের দ্বিতীয় এবং শেষ পর্যায়ে। এই দুই শীর্ষ কূটনীতিক এর আগেও এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে উভয় পক্ষ পারস্পরিক আস্থা ও সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিল।