আজকাল ওয়েবডেস্ক: টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক আবারও এমন এক ঘোষণা করেছেন যা তাঁর নামের সঙ্গে মানানসই। তিনি নাকি এবার সত্যিই গাড়িকে আকাশে ওড়াতে চান! মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন চলতি বছরের শেষের আগেই টেসলার একটি “ফ্লাইং কার প্রোটোটাইপ” দেখাতে পারবেন।
তবে মাস্ককে চেনা লোকজন জানেন এই প্রতিশ্রুতি নতুন কিছু নয়। অন্তত ২০১৪ সাল থেকে তিনি উড়ন্ত গাড়ির কথা বলে আসছেন। তাঁর অন্যান্য মহৎ পরিকল্পনার মতো মঙ্গলগ্রহে উপনিবেশ গঠন হোক বা হাইপারলুপ ট্রেন—এই ধারণাটিও এখনও “শীঘ্রই” আর “একদিন” এই দুইয়ের মাঝামাঝি ঝুলে আছে।
আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল বহু প্রতীক্ষিত টেসলা রোডস্টার নিয়ে। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত উৎপাদিত এই স্পোর্টস কারের দ্বিতীয় প্রজন্ম ২০২০ সালে আসার কথা ছিল। কিন্তু অন্যান্য মাস্ক প্রকল্পের মতোই এটি আটকে আছে তাঁর চিরচেনা “আগামী বছর” প্রতিশ্রুতির ফাঁদে।
মাস্ক নাটকীয় ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন—“আমরা খুব কাছাকাছি আছি...” একটু থেমে যোগ করলেন, “প্রোটোটাইপ প্রদর্শনের। একটাই গ্যারান্টি দিতে পারি—এই প্রোডাক্ট ডেমো হবে অবিস্মরণীয়। ভালো হোক বা খারাপ, মানুষ ভুলবে না।”
পরে তিনি ইঙ্গিত দেন, তাঁর বন্ধু পিটার থিয়েল একবার বলেছিলেন—“ভবিষ্যতে উড়ন্ত গাড়ি থাকার কথা ছিল, অথচ আমাদের কাছে এখনও নেই।” এই মন্তব্যেই শুরু হয় জল্পনা—তাহলে কি রোডস্টার আসলে উড়বে?
মাস্ক মজা করে বলেন, “আমি উন্মোচনের আগে উন্মোচন করতে পারি না।” তবে প্রতিশ্রুতি দেন, এটি হবে “ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় প্রোডাক্ট লঞ্চগুলির একটি।” তবে তিনি নিজেই সতর্ক করেন—“হয়তো বছরের শেষের আগে দেখাতে পারব… আশা করি।” তাঁর এই শব্দটাই ইঙ্গিত দেয়—টাইমলাইন এখনো অনিশ্চিত।
মাস্ক আগেও একাধিক প্রোটোটাইপ ঘোষণা করেছেন, যা বছরের পর বছরেও বাজারে আসেনি। যেমন, তাঁর স্বপ্নের হাইপারলুপ, যা ৭০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে শহর সংযোগের কথা বলেছিল, বাস্তবে পরিণত হয়েছে শুধু লাস ভেগাসে একটি ছোট সুড়ঙ্গে, যেখানে টেসলা গাড়িগুলি ধীরে চলে।
মাস্ক এই নতুন রোডস্টারকে বর্ণনা করেছেন “crazy, crazy technology” হিসেবে। তাঁর কথায়, “এটা আসলে গাড়ি কি না, তা নিয়েও আমি নিশ্চিত নই। দেখতে গাড়ির মতো, কিন্তু জেমস বন্ডের সব গাড়ি একসঙ্গে মেশালে যেমন হয়, তার চেয়েও পাগলাটে।”
১৯৫০-এর দশক থেকেই উড়ন্ত গাড়ির ধারণা রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা কখনও বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি—কারণ একে নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বিধি অনেক বেশি জটিল। যদি মাস্কের নতুন রোডস্টার সত্যিই আকাশে ওড়ে, তবে তা চালাতে লাগবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত পাইলট।
সব মিলিয়ে, ইলন মাস্ক হয়তো বছরের শেষের দিকে এমন কিছু দেখাতে পারেন যা রকেট বা গাড়ি—দুটির মাঝামাঝি কিছু। কিন্তু সেটা কি সত্যিকারের প্রযুক্তিগত বিপ্লব হবে, নাকি টেসলার কমে আসা বিক্রি ও বিতর্ক ঢাকার নতুন কৌশল—সেটা এখনও সম্পূর্ণ বিরাট জলে।
