আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিডনি পাচার চক্রের তদন্তে নেমে মূল চাঁই-সহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থানার পুলিশ ওই তিনজনকে পাকড়াও করেছে।
সম্প্রতি ধারের টাকা শোধ করতে না পারায় কিডনি কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে অশোকনগরের এক সুদখোরের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই গোটা রাজ্য তোলপাড় পড়ে যায়। পুলিশ-প্রশাসনও কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে সাংসারিক দুরবস্থার কারণে এক যুবক অশোকনগরের বাসিন্দা বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। আসল টাকা শোধ না করতে পারলেও তিনি শীতলকে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা সুদ দিয়েছেন। অভিযোগ, আসল টাকা ফেরত পেতে শীতল ঋণগ্রস্ত যুবকের স্ত্রীর একটি কিডনি কেটে বিক্রি করে দেয়। পরে সে আরও বেশি টাকা দাবি করে। শীতলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই দম্পতি অশোকনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তারপরই পুলিশ শীতলকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ধৃতকে শুক্রবার আদালতে তোলার পর নিজেদের হেফাজতে নেয়। তাকে জেরা করে সোমবার রাতে ঘুটিয়ারি শরিফের বাসিন্দা গৌর সর্দারকে গ্রেপ্তার করে। তাকেও পুলিশ হেফাজত নেওয়া হয়। তারপর ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, কিডনি পাচার চক্রের মূল পান্ডা পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা গুরুপদ জানা। তবে চক্রের সবাই তাকে অমিত নামে জানে। গুরুপদর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ঘুটিয়ারি শরিফের আর এক বাসিন্দা মৌসুমী সরদার ও বারাসতের বাসিন্দা পিয়ালি দে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অশোকনগরে সুদখোর শীতল গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই ওই তিন জন ভিনরাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার ছক করেছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার দক্ষিণেশ্বর রেল স্টেশনের কাছ থেকে পুলিশ গুরুপদ, মৌসুমী ও পিয়ালীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের দাবি, ধৃতরা অশোকনগরের ১৫ জনের কিডনি বেআইনিভাবে বিক্রি করেছে। যাঁদের কিডনি বিক্রি করা হত, সাদা কাগজে তাঁদের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় কিডনি বিক্রি করার কথা লিখিয়ে নিত। সেই মতো সমস্ত নথিপত্র তৈরি করে কিডনিদাতার স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হত। প্রথমে অসহায় মানুষদের টাকা ধার দেওয়া হত। তারপর মোটা অঙ্কের সুদ তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হত। টাকা শোধ করতে না পারলেই কিডনি বিক্রির টোপ দেওয়া হত। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ কিডনি পাচার চক্রে আরও কারা জড়িত আছে, তা তদন্ত শুরু করছে।
