আজকাল ওয়েবডেস্ক: করল, লড়ল, জিতল রে। গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে এই চেনা ধ্বনিই উঠল। বাজল এই সুর। জিতল যে কেকেআর।  

ইডেনে প্রথম ম্যাচে বিরাট-হারের পরে অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে জয় তুলে নিয়ে স্বস্তি ফিরল নাইটদের শিবিরে। অজিঙ্ক রাহানে টসের সময়েই হয়তো উপলব্ধি করেছিলেন, এই বাইশ গজে ব্যাট করা কঠিন। 

তাই রাজস্থান রয়্যালসকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়ে পরে রান তাড়া করা শ্রেয় বলে মনে করেন নাইট অধিনায়ক। তিনি যে ভুল কিছু করেননি তা প্রমাণিত এদিনের জয়ে।

রাজস্থান রয়্যালস প্রথমে ব্যাট করে তোলে ৯ উইকেটে ১৫১ রান। এই রান তাড়া করতে নেমে  কলকাতা ১৫ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয়। কেকেআরের ৮ উইকেটে ম্যাচ জয়ের নেপথ্যে রয়েছে কুইন্টন ডি ককের ব্যাট। ২০২১ সালে টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের পরে অবসর নিয়েছিলেন ওয়ানডে থেকেও। সেই কুইন্টন ডি কক প্রমাণ করলেন, তিনি গৃহস্থের গর্ব, পড়শির ঈর্ষা। 

রাজস্থানের রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টিকে রইলেন অভিজ্ঞ কুইন্টন ডি' কক। ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতালেন। মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না। তাঁর ব্যাটিং স্বস্তি আনল রাহানে-পরিবারে। ১৭.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৩ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় কলকাতা। পরের ম্যাচ ৩১ তারিখ। কেকেআরের প্রতিপক্ষ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এই ম্যাচটা সব সময়ে জিততে চান শাহরুখ খান। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কলকাতা কী করে, সেটাই দেখার। 

এদিনের ম্যাচ যে কলকাতার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে তা বলাই বাহুল্য। এদিন সব দিক থেকেই হিট কলকাতা নাইট রাইডার্স। স্পিন মন্ত্রে রাজস্থান রয়্যালসকে শান্ত রেখেছিলেন নাইট স্পিনাররা। রাজস্থানের স্পিনাররা কিন্তু বল করার সময়ে ফায়দা তুলতে পারেননি। রয়্যালসেও ছিলেন ঠিকসানা, হাসারাঙ্গার মতো স্পিনার। কিন্তু কুইন্টন ডি ককের চওড়া ব্যাটে ম্লান তাঁরা।  

না স্পিনার, না জোফ্রা আর্চারের মতো গতিসম্পন্ন বোলার কেকেআর-কে বিপদে ফেলতে পারলেন। যে রান রাজস্থান ব্যাটাররা করেছিলেন সেটাও বিশাল কিছু ছিল না। রবিন উত্থাপ্পার মতো বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, এই উইকেটে ১৮০ রান হয়। সেই জায়গায় রাজস্থান প্রায় তিরিশ রান কম করেছে। সব মিলিয়ে কেকেআরের ম্যাচ জিততে সমস্যা হয়নি।

টসের সময়েই বুক কেঁপে যাওয়ার মতো খবর পেয়েছিলেন নাইট সমর্থকরা। শেষ মুহূর্তে সুনীল নারিন ছিটকে গিয়েছেন। পুরোদস্তুর সুস্থ তিনি নন। তাঁর পরিবর্তে নেওয়া হয় মইন আলিকে। বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, নারিনের অভাব অনুভূত হবে। ধাক্কা খেল কেকেআর। কিন্তু দেখা গেল নারিন না থাকায় সমস্যা বড় আকার ধারণ করেনি। 

রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী ও মইন আলিই নাভিশ্বাস তুলে দেন রাজস্থানের। স্পিনের ছোবলেই রাজস্থান বড় রান তুলতে পারল না। বরুণ চক্রবর্তীও ইনিংসের শেষে বললেন, ''অল্প সময়ের মধ্যে মইন আলি নিজেকে দ্রুত তৈরি করে ফেলেছে।'' 

বাইশ গজে বল পড়ে ধীরে আসছে। স্পিনের বিরুদ্ধে শট মারা হয়ে যাচ্ছে কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে বরুণ ও মইন আলি রাজস্থানের ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামান। বৈভব, মইন, বরুণ ও হর্ষিত ২টি করে উইকেট নেন। স্পেন্সার জনসন একটি উইকেট নেন। 

টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্কে রাহানে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিপজ্জনক ব্যাটার সঞ্জু স্যামসন। তিনি ক্রিজে থাকা মানে দ্রুত রান ওঠা। প্রতিপক্ষের বোলারদের কঠিন পরীক্ষা নেওয়া। সঞ্জু এদিন ব্যর্থ। বৈভব অরোরার ইয়র্কারে ঠকে যাওয়ার আগে করে যান ১৩ রান। 

ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছেন রিয়ান পরাগ। তিনিই আবার রাজস্থানের ক্যাপ্টেন। তিনটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন রিয়ান। কিন্তু রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর রহস্য ভেদ করতে পারলেন না। মাঠের বাইরে পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়লেন কুইন্টন ডি ককের হাতে। রাজস্থানের রান তখন ২ উইকেটে ৬৭। তিনি ফেরার পরই ধস নামে রাজস্থানের ইনিংসে। ২ রান পরেই যশস্বী জয়সওয়াল ঠকে যান মইন আলির বলে। ব্যক্তিগত ২৯ রানে ফেরেন। রাজস্থানের রান তখন ৬৯। 

ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে (৪)এদিন প্রথম একাদশে রাখা হয়। তিনিও ঠকে যান বরুণ চক্রবর্তীর বলে। গতবার কলকাতার হয়ে খেলা নীতীশ রানাও (৮) ব্যর্থ। মইন আলির বলে বোল্ড হন তিনি। বৈভব অরোরা ফিরিয়ে দেন শুভম দুবেকে (৯)। 

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে রাজস্থানের ইনিংস সামাল দেওয়ার কাজ করেন ধ্রুব জুড়েল (৩৩)। হর্ষিত রানাকে আক্রমণ করতে গিয়ে ফুলটস বল টেনে আনলেন স্টাম্পে। 

হেটমায়ার ঝড় তুলতে পারলেন না। হর্ষিত রানাই ফেরালেন তাঁকে। জোফ্রা আর্চার দ্রুত কিছু রান তুলে রাজস্থানকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেন। কিন্তু সেই রানের পুঁজি জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। দ্বিতীয় হার হজম করতে হল রাজস্থানকে।