আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় ক্রীড়া জগতে এক ঐতিহাসিক নজির গড়লেন ক্রিকেট কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকর। তিনিই প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদ, যিনি তাঁর ব্যক্তিত্ব রক্ষার অধিকারের জন্য আদালতের সুরক্ষা পেলেন।
খেলাধুলা, সেলিব্রিটি সংস্কৃতি ও সাইবার আইনের আওতায় এই রায়কে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, সুনীল গাভাসকারের নাম ও ছবি অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে সমস্ত পোস্ট, ভিডিও ও সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে হবে।
আদালত আরও জানায়, অভিযুক্তরা নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হলে সেই কন্টেন্ট সরানোর দায় সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকেই নিতে হবে।
এই নির্দেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ভারতে কোনও ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব রক্ষার অধিকারের এই আইনি সরক্ষা পাওয়া প্রথম ঘটল।
বিশেষ করে অনুমতি না নিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার, ভুয়ো বক্তব্য মুখে বসিয়ে পাবলিশ করে দেওয়া এবং অনলাইন বাণিজ্যিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এই হস্তক্ষেপ আইনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গাভাসকর আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে অনুমোদন না নিয়ে পণ্য বিক্রি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর নামে ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য প্রচারের বিরুদ্ধে।
তাঁর দাবি, কোনও এক ক্রীড়াবিদের ছবি নিয়ে এই ধরনের ব্যবহার একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সিনিয়র ধারাভাষ্যকার হিসেবে গাভাসকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গাভাসকরের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট গোপাল জৈন। তাঁকে ব্রিফ করে এক আইন সংস্থার ম্যানেজিং পার্টনার বিদুস্পৎ সিংহানিয়া ও তাঁর দল।
আদালতের তরফে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া অশালীন ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট সম্পর্কিত যুক্তিও বিবেচনায় নেওয়া হয়। বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রসিকতা ও ব্যঙ্গের জায়গা থাকলেও, যেসব কনটেন্ট প্রাথমিকভাবে কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও পাবলিসিটি অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তা কোনওভাবেই অনুমোদনযোগ্য নয়।
গাভাসকরের এই আইনি পদক্ষেপ ভারতে এবং বিদেশে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব অধিকারের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকেই তুলে ধরে। ভারতে এর আগেও চলচ্চিত্র জগতের একাধিক তারকা অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন এবং অভিষেক বচ্চন তাঁদের পাবলিসিটি অধিকারের সুরক্ষায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
সাম্প্রতিক কালে সলমন খান, হৃত্বিক রোশন আর.মাধবনের মতো অভিনেতারাও তাঁদের ব্যক্তিত্বের অনুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা পেয়েছেন।
বিশ্ব মঞ্চে ক্রীড়াবিদরা বহুদিন ধরেই ব্যক্তিত্ব অধিকারের গুরুত্ব বুঝে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ‘রাইট অফ পাবলিসিটি’ ব্যাপকভাবে কার্যকর, যেখানে মাইকেল জর্ডান ও লেব্রন জেমসের মতো কিংবদন্তিরা তাঁদের নাম ও চেহারার ব্যবহারে কঠোর আইনি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন।
একইভাবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসির মতো ফুটবল তারকারাও ট্রেডমার্ক ও লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ব্র্যান্ড সুরক্ষিত রাখেন।
ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েশন, সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত বিস্তারের ফলে ডিপফেক, পরিচয় অপব্যবহার ও অনুমোদন ছাড়া পণ্যের সংখ্যা বেড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে সেলিব্রিটিরা ব্যক্তিত্ব অধিকারের ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছেন যা বর্তমান যুগে একপ্রকার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
