আজকাল ওয়েবডেস্ক: তেম্বা বাভুমা। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন। দলকে জিতিয়েছেন। ইডেনে একমাত্র অর্ধশতরান তাঁর ব্যাট থেকেই এসেছে। তবে এটা ঘটনা, টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ভারতের অস্ত্র ব্যবহার করেই শুভমান গিলদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ইডেন গার্ডেন্সে প্রোটিয়া স্পিনারদের সামনে ভারতীয় ব্যাটারদের বেহাল দশা দেখে একই কথা শোনা গেল শুকরি কনরাডের গলায়। জয়ের কৃতিত্ব দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ দিলেন সাইমন হারমার, বাভুমাদের।
ইডেন টেস্টের প্রথম একাদশে দক্ষিণ আফ্রিকা রাখেনি স্পিনিং অলরাউন্ডার সেনুরান মুথুস্বামীকে। পাকিস্তানের মাটিতে সফল স্পিনারকে ছাড়াই স্পিন সহায়ক পিচে খেলতে নেমেছিলেন বাভুমারা। যা দেখে অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন। তাতে অবশ্য সমস্যা হয়নি সফরকারীদের। হারমার একাই ৮ উইকেট নিয়েছেন। ভারতীয়দের অস্বস্তিতে ফেলেছেন দু’ইনিংসেই। ম্যাচের পর কনরাডও স্পিনারদের প্রশংসা করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ বলেছেন, ‘কয়েক জন দারুণ স্পিনারকে নিয়ে উপমহাদেশে এসেছি। খুব উত্তেজিত লাগছে। আগে উপমহাদেশে সফরগুলোর সময় আমাদের দলে তেমন স্পিনার থাকত না। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন স্পিনারদের উপরও ভরসা করছি। স্পিন বোলিং নিয়ে আগ্রহী হচ্ছে তরুণ ক্রিকেটারেরা। আমাদের ক্রিকেটে আরও চমক অপেক্ষা করছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এখন আর শুধু জোরে বোলিংয়ের দেশ নয়।’ বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্পিন দিয়ে এখন আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাবু করা সহজ নয়।
হারমারকে নিয়ে কনরাড বলেছেন, ‘কয়েক মাস আগে ও আমাকে বলেছিল, আবার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলতে চায়। আমিও হারমারকে দলে নিতে মরিয়া ছিলাম। ও ফিরে আসায় আমাদের স্পিন বোলিংয়ে শক্তি বেড়েছে। এখানে তো দুর্দান্ত বল করল।’ দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ মনে করেন, রবিবার সকালে বাভুমা এবং করবিন বসের জুটিই দু’দলের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে।
মুথুস্বামীকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কনরাড বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের সেরা হয়েছিল মুথুস্বামী। অথচ ওকে আমরা খেলালাম না। এর থেকেই বুঝুন, আমাদের স্পিন আক্রমণের গভীরতা এখন কতটা। আগে আমাদের যে দলগুলো ভারত সফরে এসেছে, তাদের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। হয়তো আমরা এখনও কয়েকটা দলের মতো শক্তিশালী নই। তাদের জায়গায় পৌঁছোতে পারিনি। কিন্তু মানসিকতার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে নেই। খামতিগুলো দল হিসাবে পূরণ করার চেষ্টা করি।’
ইডেনের সাফল্যকে টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন কনরাড। তিনি বলেছেন, ‘বছরের শুরুর দিকে আমরা লর্ডসে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হারিয়েছিলাম। এই জয়টা তার খুব কাছাকাছি থাকবে। এই ম্যাচে আমরা কখনও হাল ছাড়িনি। এই ক্রিকেটারদের জন্য আমি খুব গর্বিত। ওরা কখনও নিজেদের উপর বিশ্বাস হারায়নি। মাঠে পরস্পরকে উৎসাহিত করেছে। পরস্পরের পাশে থেকেছে। এককাট্টা হয়ে লড়াই করেছে। এই দুর্দান্ত মানসিকতা আমাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট জিতেছি। এবার ভারতে জিতলাম। তবু অনেক কাজ বাকি আমাদের। আমরা একটা টেস্ট জেতার লক্ষ্য নিয়ে বিদেশে যাই না। লক্ষ্য থাকে সিরিজ জেতা।’
চোট সারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা বাভুমাকে নিয়েও উচ্ছ্বাস গোপন করেননি দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ। ইডেনে ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা অধিনায়ককে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘গত ১৮ বা ২৪ মাস ধরে বাভুমা বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার। সেটা ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বিকালে এবং তৃতীয় দিন সকালে আবার প্রমাণ করে দিয়েছে। কী করতে চায়, তা নিয়েও খুব পরিষ্কার। ওর মনে কোনও দ্বন্দ্ব থাকে না। এই ম্যাচেও সকলের ভাবনার বাইরে বেরিয়ে পারফর্ম করল। আসলে ম্যাচের আগেই আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। শিবিরে দলের সেরা খেলোয়াড় চলে এলে কার না ভাল লাগে।’
সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গুয়াহাটিতে খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাভুমাদের সিরিজ হারের সম্ভাবনা নেই আর। আত্মবিশ্বাসী কনরাড বলেছেন, ‘গুয়াহাটির পিচে হয়তো অন্য রকম চ্যালেঞ্জ থাকবে। ওখানেও ভাল ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত এবং আত্মবিশ্বাসী।’
