আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইডেনের পর রাঁচি। জেএসসিএ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লেন এক ভক্ত।

শতরানের পর বিরাট তখন সেলিব্রেশন করছেন। সেই সময় ওই ভক্ত মাঠে সোজা নতজানু হয়ে পড়লেন কোহলির পায়ে। তাঁকে প্রণাম করলেন সাষ্টাঙ্গে।

নিরাপত্তারক্ষীরা যখন তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন তখন ওই তরুণের চোখে-মুখে এক অনাবিল আনন্দ। ঘটনাচক্রে এই তরুণও বাঙালি।

জানা গিয়েছে, মাঠে ঢুকে পড়া ওই তরুণের নাম সৌভিক মুর্মু। তিনি হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা। রবিবার রাঁচিতে ম্যাচ চলাকালীন নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে হঠাৎই মাঠে ঢুকে পড়েন তিনি।

সোজা দৌড়ে পৌঁছে যান বিরাট কোহলির কাছে এবং তাঁর পায়ে নতজানু হয়ে প্রণাম করেন। নিরাপত্তা ভেঙে এমন ঘটনায় মুহূর্তে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে মাঠে।

জানা গিয়েছে, সৌভিকের বাড়ি আরামবাগের কাবুলের মধুপুর আদিবাসী পাড়ায়। পরিবার–পরিজনের দাবি, ছেলেটি দীর্ঘদিন ধরেই বিরাট কোহলির দারুণ ভক্ত।

কোহলির আশীর্বাদ পাওয়ার স্বপ্নই তাঁকে বারবার এমন ঝুঁকি নিতে বাধ্য করেছে। এর আগেও সৌভিকের একাধিক ‘কীর্তি’ রয়েছে।

গত আইপিএলে আরামবাগ থেকে সাইকেল চেপে তিনি বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন কোহলির সঙ্গে দেখা করার আশায়। তবে সেবার ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি।

এবার তাই ভারতের ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই ঢুকে পড়েন সৌভিক। কোহলির পায়ে মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন। অবশ্য, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা সৌভিককে আটক করে রাঁচি পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এখনও পর্যন্ত তিনি পুলিশের হেফাজতেই আছেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ম্যাচের মাঝে এমন ঘটনা ঘটায় ফের প্রশ্ন উঠেছে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।

যদিও সৌভিকের পরিবারের আশা, ‘ঘরের ছেলের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, এখন যেন তাঁকে ক্ষমা করে বাড়ি ফেরানো হয়।’ বিরাট কোহলিকে দেখার জন্য কানায় কানায় ভর্তি ছিল রাঁচির স্টেডিয়াম।

চেজমাস্টার নিরাশ করেননি ভক্তদের। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। ভক্তের ভগবান তিনি। ক্রিকেট রোম্যান্সের নতুন এক অধ্যায় তিনি।

ক্রিকেট যদি ধর্ম হয়, তিনি তাহলে তার সাক্ষাৎ সাধক। তিনি বিরাট কোহলি। ঘাম-রক্তের পথ অতিক্রম করে যিনি শৌর্য-বীর্যের পোশাক পরিহিত এক নাইট।  তিনি এখনও রাজপাট চালাচ্ছেন।

লড়াকু এক মানুষের প্রতিনিধি তিনি। তাঁর চলার পথ মোটেও পাপরি বিছানো নয়। বরং তা কণ্টকাকীর্ণ। জাতীয় দলের 'হেডস্যর' গৌতম গম্ভীরই চান না বিরাট কোহলি খেলুন।

কিন্তু সেই বিরাট কোহলিই ভুল প্রমাণ করেন তাঁর নিন্দুকদের। গৌতম গম্ভীরকে বাধ্য করলেন ভাবতে।  কোহলি এখনও বিরাট ছায়া বিস্তার করতে পারে দেশের ক্রিকেটে।

মহেন্দ্র সিং ধোনির ঘরের মাঠে কোহলি খেললেন আরও একটা বিরাট ইনিংস। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পরে ফের শতরান হাঁকালেন।

এদিন প্রোটিয়া ব্রিগেডের বিরুদ্ধে বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছন। ওয়ানডে ফরম্যাটে ৫২ নম্বর শতরান হয়ে গেল কোহলির। একটি ফরম্যাটে সর্বাধিক।

শতরানের পরে বিরাট লাফে ফুটে বেরোচ্ছিল আগের ঔদ্ধত্য। কেরিয়ারের এই পড়ন্ত বেলাতেও তিনি দেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই বোলারদের সামলাতেই ইডেন-গুয়াহাটিতে ভারতীয় ব্যাটারদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার জোগাড়।

আর ভারতীয় ক্রিকেটের দুই 'বুড়ো ঘোড়া' দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দিলেন প্রোটিয়া ব্রিগেডের কাছে। রোহিত শর্মা ৫৭ রান করে থেমে গেলেন। বিরাট কোহলি থামলেন না।

তিনি সেঞ্চুরি করলেন, দেশের শ্বাসপ্রশাস জুড়ে আজ কেবলই বিরাট কোহলি। ৮৩ নম্বর সেঞ্চুরি হয়ে গেল তাঁর। এরপরও কি গম্ভীর ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য ভাববেন না কোহলির নাম?