আজকাল ওয়েবডেস্ক: এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে রোমাঞ্চকর ম্যাচে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তান। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক সলমন আলি আঘা জানালেন, এই ধরনের জয়ই তাঁকে বিশ্বাস করায় যে পাকিস্তান একটি ‘বিশেষ দল’ এবং তাঁদের ক্ষমতা রয়েছে ভারতসহ যেকোনও দলকে হারানোর। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সুপার ফোরের ম্যাচে মাত্র ১৩৫ রানের লক্ষ্য বাঁচিয়ে ১১ রানের দাপুটে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। এই জয়ের ফলে এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রথমবার মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। চলতি বছর এশিয়া কাপে এই নিয়ে তৃতীয় বার মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান এবং ভারত।
বাংলাদেশকে হারিয়ে পোস্ট ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে আগা বলেন, ‘এই ধরনের ম্যাচ জিতলে মনে হয় আমরা নিশ্চয়ই একটি বিশেষ দল। সবাই দুর্দান্ত খেলেছে। ব্যাটিংয়ে কিছুটা উন্নতির সুযোগ রয়েছে, তবে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব। ভারতকে হারানোর মতো মান রয়েছে আমাদের। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ তিনি বিশেষভাবে প্রশংসা করেন শাহিন শাহ আফ্রিদির। যিনি অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচসেরা হন। আফ্রিদি ১৩ বলে ১৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে পাকিস্তানের রান পৌঁছে দেন ১৩৫ রানে। পরে ৩/১৭ তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দেন। আঘা বলেন, ‘শাহিন একজন স্পেশাল খেলোয়াড়। দলে যা দরকার সেটাই করে। আমরা ১৫ রান কম করেছি, তবে শুরুতে যেভাবে বোলিং করেছি, ওটাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। ফিল্ডিংয়েও দল দুর্দান্ত করেছে।
মাইক হেসন স্পষ্ট বলেছেন, ফিল্ডিং না পারলে দলে সুযোগ নেই।’ শাহিন আফ্রিদি নিজের বোলিং পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘ছোট টার্গেটে শুরুতেই উইকেট দরকার ছিল। তিন ওভারের পাওয়ারপ্লেতেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। ব্যাটিংয়ে দল আমাকে পাঠায় আক্রমণাত্মক খেলতে, আর আমার মারা ছয় গুলোই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয়।’ ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনাল নিয়ে শাহিন আফ্রিদি যোগ করেন, ‘আমরা প্রস্তুত।’ বুধবার বাংলাদেশকে ৪১ রানে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা পাকা করেছে টিম ইন্ডিয়া। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাট সইফের ক্যাচ তিনবার ফেলেছেন ফিল্ডাররা। অন্যদিক থেকে পরপর উইকেট পড়তে থাকায় সেই ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হয়নি। এখনও পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে সূর্যরা অপরাজিত।ভারতকে বুধবার ১৬৮ রানে আটকে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হারানো আর ভারতের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া এক ব্যাপার নয়। একাধিক ক্যাচ ফেললেন ভারতের ফিল্ডাররা। এই ক্যাচ ফেলা ভারতের হেডস্যর গৌতম গম্ভীরকে চিন্তায় ফেলতে পারে।
ফাইনালের আগে ফিল্ডিং নিয়ে পড়তে হবে গম্ভীরকে। এখনও পর্যন্ত ভারত প্রাধান্য নিয়েই ক্রিকেট খেলেছে এশিয়া কাপে। চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে উঠতে আর এক কদম দূরে ভারতীয় দল। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের বল গড়ানোর আগে থেকেই তর্জন-গর্জন করছিলেন ফিল সিমন্স, মেহেদি হসানরা। সিমন্স বলেছিলেন, ‘সবারই ভারতকে হারানোর ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশেরও রয়েছে।’ মেহেদি হাসান বলেছিলেন, ‘আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই এই ম্যাচ।’ বুধবার ভারতের ১৬৮ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ থেমে গেল ১২৭ রানে। রান তাড়া করাটা একদমই ভাল হয়নি বাংলাদেশের। হার্দিক পাণ্ডিয়ার প্রথম ওভারে ওঠে চার রান। বুমরাহ বল করতে এসেই আঘাত হানেন। তানজিদকে ফেরান চ্যাম্পিয়ন বোলার। কুলদীপ যাদবকে সুইপ মারতে গিয়ে ইমন ফেরেন অভিষেক শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৯ বলে ২১ রান করেন। বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায় ৪৬ রানে। ৬৫ রানে তৃতীয় উইকেট যায় বাংলাদেশের। এদিকে রান রেট বাড়তে শুরু করে।
বড় শট খেলতে গিয়ে তৌহিদ হৃদয় আউট হন ৭ রানে। খাতা না খুলেই বোল্ড হন শামিম। জাকের আলি রান আউট হন মাত্র ৪ রানে। সইফ হাসান বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রেখে দেন। যখনই রানের দরকার তখনই ছক্কা হাঁকান তিনি। ১৫ ওভারের প্রথম বলে সইফের ক্যাচ ফেলেন শিবম দুবে। পরের বলেই সইফুদ্দিন ধরা পড়েন তিলক ভার্মার হাতে। নিজেদের অবস্থা আরও কঠিন করে ফেলে বাংলাদেশ। ভাগ্য ভাল সইফের। বরুণের ওভারেই ক্যাচ তুলে বেঁচে যান তিনি। এই যাত্রায় ক্যাচ ফেলেন ভারতের উইকেট কিপার সঞ্জু স্যামসন। রিশাদ হোসেন ও তানজিম দ্রুত ফেরেন। বাংলাদেশ নিজেদের বিপন্ন করে। অন্য প্রান্তে সইফের মতো জমে যাওয়া ব্যাটার রয়েছেন অথচ রিশাদ ও তানজিম নায়ক বনতে চেয়েছিলেন। পরপর দু'বলে দুই উইকেট নেন কুলদীপ। ম্যাচ জেতা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। সইফ একা লড়লেন। ৬৯ রানে তাঁকে ফেরান বুমরা। বাকিরা কেউই কিছু করতে পারেননি।
