মোহনবাগান - ২ (তিরি-আত্মঘাতী, আলবার্তো)
মুম্বই সিটি এফসি - ২ (তিরি, নৌফল)
সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ম্যাচ শেষে বজ্রবিদ্যুৎ সহ মুষলধারে বৃষ্টি। দৃশ্যমানতার অভাব। গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার পঁচিশ দর্শক বোধহয় তখনও ভাবতে পারছিল না ডুরান্ড ফাইনালের অ্যাকশন রিপ্লে কীভাবে হল! আবার সেই একই চিত্রনাট্য। জোড়া গোলে এগিয়েও ড্র। ঠিক যেন ডুরান্ড কাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তি। সেদিন নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি, এদিন মুম্বই সিটি এফসি। শুক্রবার যুবভারতীতে আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র করল মোহনবাগান। ১২ দিন আগে যুবভারতীতেই ডুরান্ড ফাইনালে প্রথমার্ধে জোড়া গোলে এগিয়েও বিরতির পর গোল হজম করে সবুজ মেরুন। এদিনও ঠিক তাই। আজও চোট পেয়ে অ্যালবার্তো মাঠ ছাড়ার পর। বাঁশি হাতে একই নাটকের সাক্ষী রেফারি হরিশ কুন্ডু। আইএসএল জমানায় বরাবরই মোহনবাগানের গাঁট মুম্বই। শুধুমাত্র গতবছর ঘরের মাঠে তাঁদের হারিয়ে লিগ শিল্ড জেতে বাগান। মনে হয়েছিল এদিনও মুম্বইয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে বাগান। কিন্তু ফের তীরে গিয়ে তরী দুবল। জঘন্য রক্ষণ। মাঝমাঠেও সমস্যা প্রকট। সম্পূর্ণ ফিট নয় দিমিত্রি পেত্রাতোস। তথৈবচ জেসন কামিন্স। দশ বছর পর আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচ হল কলকাতায়। ২০১৪ সালে প্রথম আইএসএলের জাঁকজমক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শহরেই হয়েছিল। এদিন লিগের শুরুটা যেমন ম্যাড়ম্যাড়ে, তেমনই ফুটবল। ম্যাচে চার গোল হলেও আহামরি ফুটবল খেলেনি কোনও দলই।
গত মরশুমে এই মুম্বইয়ের কাছে হেরেই আইএসএল ট্রফি হাতছাড়া হয়েছিল। মরশুমের সবচেয়ে খারাপ ম্যাচ খেলে হাবাসের দল। কিন্তু এবার মুম্বইয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। দল ছেড়েছেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট, পেরেরা ডিয়াজ, আপুইয়া, রাহুল বেকে। মরশুমের প্রথম ম্যাচেই এর ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন হোসে মোলিনা। আগের দিনই বাগান কোচ জানিয়ে দিয়েছিলেন, অতীত নিয়ে ভাবছেন না। তার ইঙ্গিত মিলল ম্যাচে। ডুরান্ডে খেলা দলে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন করেন বাগান কোচ। প্রথম একাদশে রাখেননি টম আলড্রেড, অনিরুদ্ধ থাপা, মনবীর সিং, সাহাল আব্দুল সামাদকে। তরুণ ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাসের ওপর ভরসা রাখেন। প্রথমার্ধে জোড়া গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। তবে ম্যাচের শুরুতেই একটা ঝাপটা দেওয়ার চেষ্টা করে মুম্বই। ৪ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু অফসাইডের জন্য গোল বাতিল হয়ে যায়। জন টোরালের গোলমুখী শটে পা ছোঁয়ান বিপিন সিং। তিনি অফসাইডে ছিলেন। ম্যাচের ১০ মিনিটে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। লিস্টনের নীচু ক্রস গোলকিপার লাচেনপার হাত ছুঁয়ে তিরির গায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। মুম্বইয়ের ডিফেন্ডারের আত্মঘাতী গোল।
তার চার মিনিটের মধ্যে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল মুম্বই। ১৪ মিনিটে কারেলিসের হেড বাইরে যায়। তার ১৫ মিনিটের মধ্যে ২-০। আশিস রাইয়ের সেন্টার হেড করে নামিয়ে দেন স্টুয়ার্ট। বাঁ পায়ের শটে গোল অ্যালবার্তোর।
প্রথমার্ধে জোড়া গোল হলেও খেলার মান তেমন উন্নত ছিল না। মরশুমের প্রথম ম্যাচ। দুটো দলই একশো শতাংশ প্রস্তুত ছিল না। পরিচিত দিমিত্রিকে পাওয়া যায়নি। দেখে আধা ফিট মনে হয়। বিরতির পর একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে গোল করতে ব্যর্থ পেত্রাতোস। পুরোনো দলের বিরুদ্ধে কিছুটা চেষ্টা করেন স্টুয়ার্ট। বিরতিতে জোড়া গোলে এগিয়ে ছিল বাগান। কিন্তু তাতেও জয় নিশ্চিত ছিল না। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।
নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগ নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরে মুম্বই। মানজোরো, নৌফালকে নামানোর পর পিটার ক্র্যাটকির দলের খেলায় বাঁধুনি ফেরে। এদিন ছাংতেকে বোতলবন্দি করে দেন মোলিনা। দুই বন্ধুর লড়াইয়ে টেক্কা দেন আপুইয়া। কিন্তু তাতেও জয় এল না। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ব্যবধান কমায় মুম্বই। আশিসের গায়ে লেগে তিরির শট গোলে ঢুকে যায়। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে ২-২। নৌফলের সেন্টার থেকে গোল করেন থায়ের ক্রোউমা। বিশেষ করে নৌফলের প্রশংসা করতেই হবে। তিনি নামার পর আরও বেশি আগ্রাসী দেখায় মুম্বইকে। আরও একটি জেতা ম্যাচে পয়েন্ট খোয়াল বাগান। মাথাভারি দল। আক্রমণে জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিন্স, দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং গ্রেগ স্টুয়ার্ট। কিন্তু রক্ষণ বারবার প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। গত কয়েক ম্যাচের ট্রেন্ড বলছে, ম্যাচ জিততে দুই গোলের ব্যবধান নিরাপদ নয়, অন্তত তিন থেকে চার গোলে এগিয়ে থাকতে হবে বাগানকে।
ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী
