আজকাল ওয়েবডেস্ক: গৌতম গম্ভীরের সাজঘরে তাঁর যে জায়গা হবে না আগেই বুঝে গিয়েছিলেন। তাই একপ্রকার হতাশ হয়েই চেতেশ্বর পূজারা জানিয়ে দিলেন, অনেক হয়েছে। সব ধরনের ক্রিকেট ফরম্যাট থেকে অবসর গ্রহণ করলেন তিনি। রাজকোটের এক ছোট শহর থেকে একদিন ক্রিকেটপরিক্রমা শুরু করেছিলেন।
আজ রবিবার শেষ হয়ে গেল তা। ভক্তদের মতোই ভারতীয় দলের হেডস্যর গৌতম গম্ভীরও পূজারাকে নিয়ে আবেগপ্রবণ। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ''বাইরে যখন ঝড় বইছে তখন ও অবিচল থেকেছে। আশা যখন আর নেই তখনও লড়ে গিয়েছে। অভিনন্দন পুজি।''
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিল পূজারার। ১০৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। ৭,১৯৫ রানের মালিক তিনি। ১৯টি সেঞ্চুরি ও ৩৫টি হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। ২০৬ তাঁর টেস্টে সর্বোচ্চ। পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছিলেন। ৫১ রান করেছিলেন তিনি। ঘটনাক্রমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই শেষ টেস্ট ম্যাচ তিনি খেলেন। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুরু, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই শেষ। ২০১৮-১৯ মরশুমের বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে পূজারা ৫২১ রান করেছিলেন সাতটি ইনিংসে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম সিরিজ জিততে সাহায্য করেছিলেন। প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ হয়েছিলেন পূজারা।

২০২০-২১ মরশুমে গাব্বা টেস্ট চলাকালীন পূজারার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেছিল অজি বোলারদের বিষাক্ত ডেলিভারি। কিন্তু পূজারা দমবার পাত্র ছিলেন না। তিনি ওই বডিলাইন সিরিজের সামনে বুক চিতিয়ে ব্যাটিং করে যান। কিছুতেই নিজের উইকেট ছুড়ে দেননি। ২১১ বল খেলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। শেষমেশ ভারত তিন উইকেটে ম্যাচটা জিতেছিল। তিন নম্বরে নেমে ৬৪৮৮ রান করেন পূজারা। তাঁর আগে কেবল রয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। ১৩৩টি টেস্টে দ্রাবিড় তিন নম্বরে নেমে করেছিলেন ১০,৩৮১ রান।
রাহুল দ্রাবিড় পরবর্তী সময়ে তিনিই ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের 'দ্য ওয়াল'। তাঁর ডিফেন্স ভাঙা ছিল কঠিন। চাপের মুখে একদিকের উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতেন তিনি। বিদেশের মাটিতে কঠিন পরিস্থিতিতে পূজারা সবঅর্থেই পাঁচিল হয়ে ধরা দিতেন। পূজারা এদিন অবসর নিয়ে ফেললেন। কিন্তু ব্যাট হাতে তাঁর অবিশ্বাস্য পুজোগুলো কি কেউ ভুলতে পারবেন? তাঁর মতো ধৈর্যবান, টেকনিক্যালি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যাটারের খুব প্রয়োজন ভারতীয় ক্রিকেটে। উঠতি প্রজন্ম অনুসরণ করুক চেতেশ্বর পূজারা নামের এক ক্রিকেট পূজারীকে।
পূজারা বলেছেন, ''রাজকোটের ছোট্ট এক শহরের ছোট্ট একটি ছেলে বাবা-মার হাত ধরে তারা হওয়ার যাত্রা শুরু করেছিল। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অংশ হওয়ার স্বপ্ন দেখত। তখনও কি আমি জানতাম এই খেলাটা আমাকে মূল্যবান কিছু মুহূর্ত, দুর্দান্ত কিছু অভিজ্ঞতা, ভালবাসা এবং সর্বোপরি রাজ্য ও দারুণ এক দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেবে।'' সেই পূজারাই তাঁর কেরিয়ারে পূর্ণচ্ছেদ টেনে দিলেন। তাঁর সরে যাওয়া এতটাই আলোড়ন তৈরি করে যে গৌতম গম্ভীরও নড়চড়ে বসেন। গম্ভীর জমানা শুরু হতেই ভারতীয় ফুটবলে কিন্তু অবসর আর অবসর। রবি অশ্বিন সিরিজ চলাকালীনই অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন। ইংল্যান্ড সফরের আগে টেস্ট থেকে অবসর নেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। এবার পূজারাও সরে গেলেন।
