কৃশানু মজুমদার: ডার্বিতে গোল করে ওডাফা ওকোলির মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। নাইজেরিয়ান গোলমেশিন তখন কলকাতা ফুটবলের হার্ট থ্রব। যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন 'কিং কোবরা'। শিল্ডের সেমিফাইনালে সেই ওডাফাই মাথা নীচু করে যুবভারতী ছেড়েছিলেন। এগিয়ে থাকা মোহনবাগানকে জোরালো ধাক্কা দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের অজি তারকা অ্যান্ড্র বারিসিচ।
তাঁর জন্যই ইস্টবেঙ্গল সমতা ফিরিয়েছিল ২০১৩ সালের সেই শিল্ড-ডার্বিতে। সেমিফাইনাল গড়িয়েছিল পেনাল্টি শুট আউটে। টাইব্রেকারে মোহনবাগানকে হারিয়ে ফাইনালের পাসপোর্ট জোগাড় করেছিল লাল-হলুদ। সেই সময়ে লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবের রিমোট কন্ট্রোল ছিল ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের হাতে।
সাহেব কোচ এখন পারথে। আর তাঁর শিষ্য ব্রিসবেন থেকে চলে গিয়েছেন বালি-তে। অ্যান্ড্রু বারিসিচের বিশ্বমানের সেই গোল ইস্টবেঙ্গলকে জীবন দিয়েছিল। হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার 'ডামি' থেকে বল পেয়ে বারিসিচ কামান দাগেন। তার উত্তর ছিল না মোহনবাগান গোলকিপার শিল্টন পালের কাছে। এখনও সেই গোল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের স্মৃতিতে টাটকা।

বাগান গোলকিপার শিল্ডন শরীর ছুড়েও বলের নাগাল পাননি। আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। সেই গোল প্রসঙ্গে বারিসিচ এখন বলছেন, ''ওই ম্যাচ মনে থাকবে না? গোলটা করার পরে এতটাই অ্যাড্রিনালিন ক্ষরিত হয়েছিল আমার শরীর থেকে যে দর্শকদের প্রবল চিৎকারও কানে ঢোকেনি। আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল।''
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সাবিথের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ওডাফার মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যখন মনে করতে শুরু করেছেন, ম্যাচে ফেরা আর সম্ভব নয়, ঠিক তখনই বারিসিচের মিসাইল। খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। ওডাফার পেনাল্টি বাঁচান ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার গুরপ্রীত। শেষমেশ পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচ জিতে ইস্টবেঙ্গল পৌঁছে গিয়েছিল শিল্ড ফাইনালে।
বারিসিচের 'গুরু' ট্রেভর মর্গ্যান প্রাক্তন শিষ্য সম্পর্কে বলছেন, ''বারিসিচ পুরোদস্তুর গোলস্কোরার। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বিশ্বমানের গোল করেছিল। খুব ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে কাজ করা খুব সহজ। দল ওর কাছে সবার আগে।''
ফুটবলের সঙ্গে এখন আর সম্পর্ক নেই বারিসিচের। তিনি এখন আবাসন শিল্পের ব্যবসা করেন। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরে মিডিয়া কোম্পানি খোলেন। এখনও সেই ব্যবসা রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। বারিসিচের নিজের মুখেই শুনুন, ''আমি এখন বালিতে থাকি। মিডিয়া ব্যবসা রয়েছে। যোগ হয়েছে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও।''

বারিসিচের দুই ছেলে। একজনের নাম রাফায়েল। তার বয়স আট। ছোট ছেলে অরল্যান্ডোর বয়স ৫ বছর। ফুটবলের প্রতি ঝোঁক রয়েছে দুই ছেলের। নিজের অভিজ্ঞতা-জ্ঞান থেকে ছেলেদের ফুটবল-শিক্ষা দেন বারিসিচ।
ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার পরে একাধিক ক্লাবে তিনি খেলেছেন। অজি তারকা বলছেন, ''ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার পরে আমি হংকংয়ে চলে আসি। সেখানকার ক্লাবে খেলি। আইএসএলের ক্লাবেও খেলেছি। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা বেশ ভাল। ওই দিনগুলো মিস করি।''
ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে অন্যপ্রান্তে চলে গেলেও প্রাক্তন ক্লাবের খোঁজখবর রাখেন বারিসিচ। লাল-হলুদ তাঁর হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। ছোট্ট ছেলেদের কাছে ইস্টবেঙ্গলের গল্প বলেন। বারিসিচ বলছেন, ''খুব ইচ্ছা, ওদের নিয়ে একদিন কলকাতায় যাব। বাবা-ছেলে একসঙ্গে বসে ডার্বি ম্যাচ দেখব।'' ফিরে যাবেন ফেলে আসা সময়ে।

স্বপ্নের জাল বুনছেন বারিসিচ। অজি তারকা এদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনেকদিন হল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে চর্চায় মেতে ওঠেন ফুটবলপাগলরা। তাঁর সেই বিখ্যাত গোল নিয়ে চায়ের পেয়ালায় তুফান ওঠে। বাঙালির বড় আবেগের ডার্বি ম্যাচ তো এমনই। তারকার জন্ম দেয় ইস্ট-মোহনের লড়াই। একটা গোল সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয় চিরদিনের জন্য। মান্না দে-র বিখ্যাত সেই গানের লাইন ধরে বলাই যায়, ''হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে।''
আরও পড়ুন: মুম্বইকে আর নেতৃত্ব দেবেন না, নতুন নেতা খুঁজে নিতে বললেন রাহানে
