কৃশানু মজুমদার: একসময়ে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের স্তম্ভ ছিলেন। প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতেন। সেই উগা ওপারা তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের ব্যর্থতায় মর্মাহত। লাল-হলুদের সমস্যা ঠিক কোন জায়গায়, তা ধরতে পেরে গিয়েছেন দীঘল চেহারার নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার। এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলছেন, ''ইস্টবেঙ্গলের সমস্যা কোথায় জানেন?''
একসময়ে উগা-উগা শব্দব্রহ্মে কেঁপে উঠত যুবভারতীর কংক্রিটের গ্যালারি। বড় ম্যাচে নামার আগে বুক ঠুকে বলতেন, ''আমরাই জিতব।'' সেই ওপারা আজকাল ডিজিটালকে বলছেন, "এই ইস্টবেঙ্গল দলে আফ্রিকান প্লেয়ারের অভাব। আগের কোচ (কুয়াদ্রাত) যখন ক্লাব ছেড়ে চলে গেলেন, তখন আমি প্লেয়ার্স লিস্ট দেখছিলাম। একজন আফ্রিকান প্লেয়ারও দেখলাম না। এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গলের দরকার আফ্রিকান ফুটবলার।"
কিন্তু কেন আফ্রিকান ফুটবলার? আইএসএলের সব ক্লাবে কি আফ্রিকান প্লেয়ার রয়েছে? ওপারা ওসব যুক্তির ধার ধারেন না। তিনি বলে চলেন, "ট্রেভর মর্গ্যানের সময়ে ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি প্লেয়ারদের কথা নিশ্চয় মনে আছে আপনার?"
সেই সময়ে ডিফেন্সে ওপারা, মাঝমাঠে পেন অর্জি আর অগ্রভাগে ইস্টবেঙ্গলের ফলা ছিলেন এডে চিডি। ফেলে আসা সময়ে ফিরে গিয়ে উগা ওপারা বলেন, "আমি, পেন, চিডি ছিলাম। আফ্রিকান প্লেয়ারদের স্ট্রেন্থ, স্ট্যামিনা অনেক বেশি। আমরা আই লিগ খেলতাম, সঙ্গে কলকাতা লিগ, এএফসি। অনেক সময়ে সপ্তাহে দুটো-তিনটে ম্যাচও খেলেছি।"
এদেশ ছেড়ে ওপারা চলে যাওয়ার পরে ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্র পুরোদস্তুর বদলে গিয়েছে। ভারতীয় ফুটবলের হাল হকিকত জানা নেই ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ডিফেন্ডারের।
ইস্টবেঙ্গল আগেও তাঁর কাছে প্যাশন ছিল, এখনও তাই। প্রাক্তন ক্লাবের হারের গল্প শোনা তাঁর কাছে বেদনার। এক নিঃশ্বাসে ওপারা বলছেন, "ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে কেবলই শুনছি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলা হলে মোহনবাগান জিতেই চলেছে। এ কেমন ব্যাপার?"
ওপারার সময়েও ইস্টবেঙ্গল দাপট দেখিয়ে ডার্বি জিতেছে। কিন্তু ছবিটা বদলে গিয়েছে এখন। কার্লেস কুয়াদ্রাতের আমলে ইস্টবেঙ্গল তবুও হারিয়েছিল সবুজ-মেরুনকে। কিন্তু নতুন মরশুমে সেই ব্যর্থতার কাহিনিই চলছে। আইএসএলে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে বসেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। শনিবারের বড় ম্যাচে যুবভারতীতে উড়েছে সবুজ-মেরুন আবির।
কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবে। ব্যর্থ হওয়ায় কার্লেস কুয়াদ্রাত মরশুমের শুরুতেই দায়িত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছেন স্পেনে। নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোঁ হাল ধরেছেন। ইস্ট-মোহন বড় ম্যাচের দিন ভোর রাতে শহরে পা রেখেই ইস্টবেঙ্গলের রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ডার্বিতে।
ওপারা বলছেন, "মাঠে নেমে প্লেয়ারকে খেলতে হবে। ইস্টবেঙ্গলকে আমার পরামর্শ ভাল মানের আফ্রিকান ফুটবলার নিতে হবে। তাহলেই বদলে যাবে এই ইস্টবেঙ্গল।"
লাল-হলুদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে গেলেও ক্লাবের ব্যর্থতায় তিনি হতাশ হন। যদি সম্ভব হত, এখনই হয়তো ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে নেমে পড়তেন মাঠে। ডিফেন্স আগলে রাখতেন। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়! তাই দূর থেকেই তাঁর প্রাণপ্রিয় ইস্টবেঙ্গলের জন্য পরামর্শ, আফ্রিকান ফুটবলার নাও, সাফল্য ঠিক আসবে।
