কৃশানু মজুমদার: মেসি-আবেগে ডুবে আর্জেন্টিনা। শুক্রবার নীল-সাদা জার্সিতে ফুল ফুটিয়েছেন মহানায়ক। মেসির নায়ক হওয়ার দিনে আরেক 'মেসি'র সামনে খুলে গেল ফুটবলের এক অনন্ত আকাশ। ৯ বছরের ছোট্ট মেয়ে আত্মজা মালাকারের নাম জড়িয়ে গেল ইংল্যান্ডের নামী ক্লাব চার্লটন অ্যাথলেটিকের সঙ্গে।
মা-বাবা তাকে আদর করে 'মেসি' বলে ডাকে। খুদে বাঙালি 'মেসি'র শয়নে, স্বপনে এবং জাগরনে নীল-সাদা কিংবদন্তি। মহানায়কের ছবি স্কেচ করে আত্মজা। মেসি গোল করলে আনন্দে ভাসে। মেসির জোড়া গোলের দিনেই আত্মজার কাছে খবর এল সে এবার চার্লটন অ্যাথলেটিক ক্লাবে ফুটবলের অ-আ-ক-খ-এর পাঠ আরও ভাল ভাবে শিক্ষা নিতে পারবে। একেই কি বলে সমাপতন!
আত্মজার বাবা অভ্র মালাকার কর্মসূত্রে ইংল্যান্ড-নিবাসী। পেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অভ্রবাবু ইস্টবেঙ্গল অন্ত প্রাণ। আজকাল ডিজিটাল-কে তিনি বলছিলেন, ''এমার্জিং ট্যালেন্ট সেন্টার চালু করেছে এফএ। ২ সেপ্টেম্বর ওর ট্রায়াল ছিল। আজ শুক্রবার মেল পাঠিয়ে জানানো হল চার্লটন অ্যাথলেটিক ক্লাবে সুযোগ পেয়েছে আমার বড় কন্যা।''
ছোট বোন অঙ্কজার বয়স সাত। সেও ফুটবলের সঙ্গে সন্ধি করতে শুরু করেছে এই ছোট্ট বয়স থেকেই। আর্জেন্টিনা ভক্ত অভ্রবাবু বলছেন, ''আমার মনে হয় ছোট মেয়ে বড়টার থেকেও প্রতিশ্রুতিমান। তবে খুব একটা সিরিয়াস নয়। অবশ্য এখনও ঢের সময় পড়ে রয়েছে। দেখা যাক।''

আদ্যন্ত ফুটবল ভক্ত অভ্রবাবু। চাকরি নিয়ে রানির দেশে আসার পরে মেয়েদের জন্য স্কুল খোঁজার আগে ফুটবল কোচিং সেন্টারের খোঁজ নিয়েছেন। ফুটবলে সঁপেছেন প্রাণ। হরিপালের অভ্র মালাকার বলেন, ''ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখার আগে থেকেই আর্জেন্টিনার খেলা দেখেছি। সেই কারণে বড় মেয়ের নাম রেখেছি মেসি। আর আমাদের দেশের মহিলা ফুটবলার বেমবেম দেবীর নাম থেকেই ছোট মেয়ের নাম বেমবেম।'' তিনি নিজেও ফুটবলের টানে, আর্জেন্টিনার আকর্ষণে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যান বিশ্বকাপ দেখতে।
কীভাবে শুরু হল কন্যা 'মেসি'র ফুটবলযাত্রা? বড় কন্যার সাফল্যে গরিয়ান বাবা বলছিলেন, ''এখানে আসার পরে ওয়াইল্ড ক্যাটসের প্রোগ্রামে আত্মজাকে ভর্তি করি। আমরা কেন্টে থাকি। সেখানে উডকম্ব লায়নেসেস ক্লাব তৈরি হয়। সেখানেই আমার মেয়ে ফুটবল শিখতে শুরু করে। আগামী মঙ্গলবার থেকে চার্লটন অ্যাথলেটিক ক্লাবে আত্মজার ফুটবল-যাত্রা শুরু হবে।''
দেড় ঘণ্টার ফুটবল-ট্রায়ালে দেখা হয়েছে বাঙালি 'মেসি'র বলের উপরে নিয়ন্ত্রণ, বল পায়ে আত্মবিশ্বাস এবং একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে বল নিয়ে দক্ষতা। বলের সঙ্গে কার কতটা বন্ধুত্ব, সেটাই ছিল ট্রায়ালের বিষয়বস্তু। এই ছোট্ট বয়সে ৯ বছরের 'মেসি' রীতিমতো নজর কেড়ে নিয়েছে।

অভ্রবাবু বলছিলেন, ''আমাদের বাড়ি হরিপাল। দু'বছর বয়স থেকেই লক্ষ্য করেছি বল পায়ে ও দৌড়ত, বল শট করত। এখন খেলাটার প্রতি ভালবাসা জন্মেছে। ফুটবল নিয়ে প্রশ্ন করে। কোনও বুক শপে গেলে ফুটবল সংক্রান্ত বই নিয়ে নাড়াচাড়া করে, সেগুলো পড়ে।''
ক্লাস ফাইভের আত্মজা একাধারে স্টপার আবার স্ট্রাইকারও বটে। ইস্টবেঙ্গলের গান শুনলে এই ছোট্ট বয়সে আত্মজার শরীরেও রক্তের গতি বেড়ে যায়। বাবার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছে, ''জার্সি মায়ের মতোই পূজনীয়।''
অভ্রবাবু বলছেন, ''আমার বাবাও ফুটবল অন্ত প্রাণ ছিলেন। আমিও তাই।'' দেশ ছেড়ে বিদেশে গেলেও পরিবারের সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ইংল্যান্ডের নামী ক্লাবের আরও বড় মাঠে এবার নিজেকে মেলে ধরবে বাঙালি কন্যা। এখন থেকেই সেই স্বপ্ন দেখা যায়। ছোট্ট 'মেসি'কে নিয়ে সেই স্বপ্নিল রাস্তাতেই হাঁটতে শুরু করেছেন বাঙালি অভ্র।
