আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে হ্যান্ডশেক বিতর্ক। টসের পর ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব হাত মেলাননি পাক অধিনায়ক সলমন আঘার সঙ্গে। আবার খেলা শেষেও পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে সোজা মাঠ থেকে বেরিয়ে যান সূর্য ও শিবম দুবে। ড্রেসিংরুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয় টিম ইন্ডিয়া। 


এরপরই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে হ্যান্ডশেক বিতর্কে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে তারা। এই বিতর্কের মাঝেই বড় চমক। জানা গিয়েছে, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মহসিন নকভির বোর্ড থেকে। সেই নির্দেশ পেয়েই দুই অধিনায়ককে হাত মেলাতে নিষেধ করেছিলেন পাইক্রফ্ট। এই বিষয় সামনে আসার পর ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে এই বিতর্ক।


পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরও প্রধান মহসিন নকভি। দু’টি দায়িত্বই সামলান তিনি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ম্যাচ রেফারি হিসাবে আইসিসি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব দিলেও তাঁকে কী করতে হবে, সেই নির্দেশ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল দিয়েছে। এক সূত্র তাদের বলেছে, ‘‌এর সঙ্গে আইসিসি–র কী সম্পর্ক? আইসিসি–র কাজ ম্যাচ রেফারির নাম চূড়ান্ত করা। তার পর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের আধিকারিক পাইক্রফ্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁকে কী করতে হবে সেই নির্দেশ দিয়েছেন। যদি টসের পর পাইক্রফ্টই অধিনায়কদের হাত মেলাতে নিষেধ করেছিলেন, তা হলে সেই নির্দেশ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে দেওয়া হয়েছিল। সেটা কে করল? নকভি আগে সেটা খুঁজে বার করুক। তার পর অন্যদের দিকে আঙুল তুলবে।’‌


এটা ঘটনা, ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে টসের পর সলমন আলি আঘার সঙ্গে হাত মেলাননি সূর্য। খেলা শেষেও সেই ছবি দেখা যায়। সাজঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। প্রতিবাদে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করে পাকিস্তান। এই ঘটনায় ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্টকে নিশানা করেছে পাকিস্তান। তাঁর অপসারণ চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি লিখেছেন, ‘আইসিসির দ্বারস্থ হয়েছে পিসিবি। ম্যাচ রেফারির বিরুদ্ধে আইসিসির আচরণবিধি এবং এমসিসির নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। এশিয়া কাপ থেকে ম্যাচ রেফারিকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছে পিসিবি।’ পাকিস্তানের অভিযোগ ছিল, ম্যাচ রেফারি আইসিসির আচরণবিধি এবং এমসিসির নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা, তাঁদের অভিনন্দন বা শুভেচ্ছা জানানো রীতি বা ক্রিকেটীয় সৌজন্য। বাধ্যতামূলক নয়। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচ রেফারি হিসাবে পাইক্রফ্ট নিয়ম বিরুদ্ধে কিছু করার পরামর্শ দেননি। দাবি মানা না হলে আমিরশাহির বিরুদ্ধে ম্যাচ না খেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। যদিও আইসিসি পাকিস্তানের দাবি মানেনি। ম্যাচ রেফারি হিসেবেই থেকে যাচ্ছেন পাইক্রফ্ট।


এই বিতর্কের মাঝেই জবাব দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও। সরকারি ভাবে বিসিসিআই কোনও বিবৃতি না দিলেও সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সূর্যকুমার যাদবরা যা করেছেন, তা একেবারে ঠিক। ভারতীয় বোর্ড ক্রিকেটারদের পাশে রয়েছে। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‌দেখুন, ক্রিকেটের নিয়মে খেলা শেষে প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক নিয়ে কিছু লেখা নেই। সাধারণত সম্মান জানাতে দু’দলের ক্রিকেটারেরা হাত মেলান। বিশ্ব জুড়ে সেটাই দেখা যায়। কিন্তু এর তো কোনও নিয়ম নেই। তা হলে পাকিস্তান কোন ভিত্তিতে অভিযোগ করছে।’‌


ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক তাতে ভারতীয় ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলালে সেটাই অস্বাভাবিক হত। সূর্যরা ঠিক করেছেন। তিনি বলেন, ‘‌যদি কোনও নিয়মই না থাকে তা হলে সূর্যরা একদম ঠিক করেছে। যে দেশের সঙ্গে আমাদের এত খারাপ সম্পর্ক, যে দেশ সব সময় আমাদের খারাপ চেয়েছে তাদের সঙ্গে হাত কেন মেলাব। কোনও রকম সম্পর্ক রাখব না। সূচি অনুযায়ী ভারত খেলেছে। তার বেশি কোনও সম্মান দেখানো হবে না।’‌