আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে আবারও অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে বৃদ্ধি পেতে পারে সংঘাত। রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লেনদেন দ্রুত আরও নিখুঁত এবং নিরাপদ করার জন্য ব্রিকস প্ল্যাটফর্মে একটি স্বাধীন লেনদেন ব্যবস্থা তৈরির প্রস্তাব করেছেন। ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে জাতীয় মুদ্রায় লেনদেনের আবেদন আমেরিকার জন্য নানাভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমাতে ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে জাতীয় মুদ্রায় একটি 'স্বাধীন লেনদেন ব্যবস্থা' প্রতিষ্ঠার জন্যই পুতিনের আবেদন। কয়েক দশক ধরে মার্কিন ডলার বিশ্বের প্রধান ব্যবসায়ী মুদ্রা। এর অর্থ, বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ডলারে সঞ্চয় করে রাখে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিশেষ করে তেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বাণিজ্যে লেনদেন ডলারে হয়। এই আধিপত্য বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকাকে একটি দৃঢ় অবস্থান করে দিয়েছে। ডলারে ফলে আমেরিকা কম সুদের হারে ঋণ নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার উপর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ক্ষমতা রাখে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের জঙ্গি কীভাবে হয়ে উঠল ‘ব়্যাম্বো’, ৩০০ সন্ত্রাসীকে নিকেশে ভারতকে বিশেষ সাহায্য করেছিল মুশতাক

ডলারের এই আধিপত্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ সুবিধার। প্রথমত, মার্কিন সরকার চাহিদা মেটাতে কম ঋণ খরচে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। কারণ, বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা সর্বদা থাকে। 

দ্বিতীয়ত, আমেরিকা ডলারের আধিপত্যকে অর্থনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যেমনটি রাশিয়ার মতো দেশগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে করেছে। ডলার-ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে কোনও দেশকে বাদ দিয়ে, আমেরিকা সেই দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

তৃতীয়ত, আমেরিকান সংস্থাগুলির জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসা করা সহজ এবং সস্তা। কারণ, সংস্থাগুলিকে ক্রমাগত মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মুদ্রাস্ফীতির কিছু অংশ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারে। ডলারের জন্য শক্তিশালী বিশ্বব্যাপী চাহিদা তার অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি কম রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: ১৫ বছরে ৪৫ লক্ষ গুণ রিটার্ন! বিটকয়েনে দু’টাকা বিনিয়োগ করলে আজ আপনিও হতে পারতেন কোটিপতি

বর্তমানে চলতে থাকা শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে ভারত ডলারে লেনদেন না করে এবং ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করে অনেক বড় সুবিধা পেতে পারে। ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কের চাপ বিভিন্ন দেশের উপরে পড়েছে। খাঁড়া পড়তে পারে ভারতের উপরেও। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ভারতকে মার্কিন ডলারের উপর প্রচুর নির্ভর করতে হয় এবং ডলারের মূল্যের ওঠানামা ভারতীয় অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর ফলে আমদানি ব্যয়বহুল এবং রপ্তানি কম প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে। জাতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করে ভারত ডলারের ঝুঁকি কমাতে পারে। যখন রুপিতে বাণিজ্য করা হবে, তখন ভারতীয় সংস্থাগুলিকে ডলার-রুপির বিনিময় হারের ওঠানামার কারণে ক্ষতির বিষয়ে কম চিন্তিত হবে। এর ফলে ব্যবসা করার খরচও কমবে এবং রপ্তানি আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।