বিভাস ভট্টাচার্য
ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে কী হবে? নাগরিকত্ব কি চলে যাবে? এসআইআর ঘোষণার পর রাজ্য জুড়ে ঘুরছে এই প্রশ্ন। আবার কেন্দ্রীয় সরকার আগেই ঘোষণা করেছে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএ। যেখানে এদেশের নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য অবশ্যই পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে আসা ব্যক্তিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রীষ্টান বা পার্সি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। দেশ ভাগের পরে এদেশে সবথেকে বেশি আশ্রয় বা কাজের সন্ধানে এসেছেন বাংলাদেশের বাসিন্দারাই। সীমান্তে ঢিলেঢালার সুযোগ নিয়ে এখনও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘটে বলে অভিযোগ। যদিও বিএসএফ বা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে যখন এই অনুপ্রবেশকারীরা গ্রেপ্তার হয় তখন তাদের ঠাঁই হয় সংশোধনাগারে।
এসআইআর চালুর আগে থেকেই বনগাঁয় সিএএ শিবির স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিজেপি। তৃণমূলের দাবি, সিএএতে নাম লেখানো মানেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং এটা ততদিন চলবে যতদিন না পর্যন্ত নাগরিকত্বের বিষয়টি ফয়সালা হয়। যা নিয়ে সরগরম হয়েছে স্থানীয় রাজনীতি। বাদানুবাদের এই রাজনীতির মাঝেই রাজ্যে চালু হয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। যা হচ্ছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ধরে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যদি এই তালিকায় নাম না থাকে তবে কি নাগরিকত্ব চলে যাবে? এদেশে বসবাসকারী মতুয়াদের মধ্যে যেমন ভারতের স্থায়ী বাসিন্দাও আছেন তেমনি ওপার বাংলা থেকে বাধ্য হয়ে চলে আসা মতুয়ারাও আছেন বলে শোনা যায়। বনগাঁ, নদীয়ায় যেমন মতুয়াদের একটি বিরাট অংশ বসবাস করেন তেমনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও এই মতুয়ারা আছেন। অনেকের মতো এই মতুয়াদের কিছু অংশের জন্মের শংসাপত্র নেই। রাজ্য বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কের একটি অংশ হল মতুয়া।আবার তৃণমূলের পিছনেও মতুয়া সমর্থন যথেষ্ট রয়েছে। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। মতুয়া ভোট সামনে রেখে তাঁদের ভোটাধিকার যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্য বিজেপি ইতিমধ্যেই তাদের সিএএ শিবিরের সংখ্যা বাড়িয়েছে। যার অর্থ নাম বাদ গেলেও যাতে মতুয়া বা অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকরা নাগরিকত্বের আবেদন জানিয়ে এদেশেই থেকে যেতে পারেন। আবার তৃণমূলের লক্ষ্য বিজেপির থেকে মতুয়া সমর্থন সরিয়ে নেওয়া। কারণ দুয়ারে ভোট এসে কড়া নাড়ছে। ইতিমধ্যেই মতুয়া নেত্রী এবং তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মতুয়া ভোটারদের একটি বিরাট অংশের নাম এই এসআইআর-এর মাধ্যমে বাদ যেতে পারে। প্রতিবাদে মতুয়ারা ঠাকুরবাড়িতে 'বড়মা' বীনাপানিদেবীর ঘরের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসবেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল প্রথমদিন থেকেই বিধানসভা ভোটের আগে আগে তাড়াহুড়ো করে করা এই এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। মঙ্গলবার দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতায় একটি মহা মিছিলও আয়োজন করে তারা। মিছিলের শেষে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা ও অভিষেক অন্যান্য 'ইস্যু'র সঙ্গে মতুয়া ইস্যুটিও বারবার তুলে ধরেছেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ডেকে নিয়ে এসেছেন মঞ্চের কাছে। একদিকে যেমন তাড়াহুড়ো করে করা এই এসআইএর-এর সমালোচনা করে এদিন তিনি মোদি সরকারকে সরানোর ডাক দিয়েছেন তেমনি আলাদা করে মতুয়াদের সম্পর্কে বার্তা দিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই দেখার বিষয়, শেষপর্যন্ত মতুয়া ভোট কোন শিবিরে বেশি ঢোকে। ঘাসফুলের বাক্সে না পদ্ম ফুলের বাক্সে?
