কোনও লক্ষণ নেই। একদম স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন। অথচ ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের কোনও সমস্যা দেখা দেবে কিনা সেটা কি আগে থেকে বলাই যায়? আপাতভাবে হয়তো অনেকেই উত্তর দেবেন, না। কিন্তু সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের রোগের কোনও লক্ষণ না থাকলেও সামান্য একটা রক্ত পরীক্ষাই পূর্বাভাস দেবে তার।
সম্প্রতি এক নিউরোসার্জন জয় জগন্নাথন তাঁর ইন্সটাগ্রামে ফলোয়ারদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, 'লক্ষণ দেখা দেওয়ার বহু বছর আগেই যদি সচেতন করে দেয়, তবে কি এই পরীক্ষা করাবেন?' এই পোস্টেই তিনি নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেন পরীক্ষাকে সম্ভাব্য 'গেম চেঞ্জার' তকমা দিয়েছেন। স্নায়ুর কোনও কোষ আঘাত পেয়েছে কিনা সেটা বিচার করা হয় যে পরীক্ষার মাধ্যমে সেই নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেন বর্তমান সময়ে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য কেমন থাকবে না থাকবে সেটার পূর্বাভাস দেওয়ার অন্যতম উপায় হিসেবে উঠে আসছে। অ্যালঝাইমার্সের থেকে পারকিনসন্স, স্ট্রোক -সহ নানা সমস্যাকে আগেই চিহ্নিত করবে এই পরীক্ষা। কিন্তু কেন এই পরীক্ষা বর্তমানে চর্চায় উঠে এল? স্নায়ু কোষ সহজে মেরামত হতে চায় না। আর এই নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেনের মাত্রা বেশি থাকা মানেই লক্ষণ দেখা দেওয়ার বহু আগে থেকেই নীরবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে চলেছে।
কিন্তু কী এই নিউরোফিলামনেট লাইট চেন? কীভাবে হয় এই পরীক্ষা? ভীষণ জটিল নাকি? উক্ত বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন এই সিরাম বা প্লাজমা টেস্টটি আদতে একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে থাকা ছোট ছোট প্রোটিনের কণা মাপা হয়। প্রোটিনের কণাগুলি মূলত নিউরনের মধ্যে থাকে। যখন মস্তিষ্ক বা শিরদাঁড়ার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন তা সেখান থেকে নির্গত হয়। চিকিৎসক জয় জগন্নাথনের মতে, এই নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেন পরীক্ষা এমআরআইয়ে কোনও বদল ধরা পড়ার আগেই মস্তিষ্কের ক্ষতিকে চিহ্নিত করে ফেলতে পারে।
সুস্থ থাকতে, বিপদ এড়াতে কী কী করণীয় সেটাও বাৎলে দিয়েছেন খোদ চিকিৎসকই। তাঁর মতে মস্তিষ্কের রোগ এড়াতে চাইলে রক্তচাপ এবং সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। সঙ্গে চাই রোজ ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, সুষম খাদ্য। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে এবং মদ-ধূমপান থেকে দূরে থাকলেও মস্তিষ্কের সমস্যাকে এড়ানো সম্ভব। চিকিৎসক জয় জগন্নাথনের মতে কারও পরিবারে যদি স্নায়বিক রোগের ইতিহাস থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে এই পরীক্ষা করা উচিত।
কিন্তু জয় জগন্নাথনের এই দাবি কি আদৌ সঠিক? অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউরোফাইলামেন্ট লাইট চেন বেশি থাকলে স্নায়বিক ক্ষতিকে বোঝায়। চলতে থাকা মস্তিষ্কের ক্ষতি বোঝার বা চিহ্নিত করার অন্যতম উপায় হল এই পরীক্ষা। নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেনের মাত্রা বেশি থাকার অর্থই হল দ্রুত পারকিনসন্স বা অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া। যদিও কোন রোগ সেটা নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।
