আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইরানের তিনটি পরমাণু ঘাঁটিতে আমেরিকার বোমা হামলার পরেই সে দেশের সংসদ বিশ্বে তেল পরিবহনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল এই প্রণালী ব্যবহার করেই সরবরাহ করা হয়। এর ফলে প্রতিদিন ভারতের আমদানি করা ৫৫ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ২০ লক্ষ ব্যারেলের উপর প্রভাব পড়বে।

আপাতত নয়াদিল্লি এই সংকীর্ণ জলপথটিকে নিয়ে বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন নয়। বিশ্লেষকদের মতে, আমদানির উৎসগুলিকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ায় ভারত যে কোনও শূন্যস্থান পূরণের জন্য রাশিয়া থেকে শুরু করে আমেরিকা, এমনকি ব্রাজিলের মতো বিকল্প উৎসগুলিকেও ব্যবহার করতে পারে।

কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী এক্স-এ লিখেছেন, “গত দুই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ভারত গত কয়েক বছরে তেলের আমদানির উৎসগুলিকে আরও ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের সরবরাহের একটি বড় অংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে আসে না।“

রাশিয়া সুয়েজ খাল, কেপ অফ গুড হোপ, অথবা প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে তেল রপ্তানি করে। এমনকি আমেরিকা, পশ্চিম আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা দিয়ে আনা যেতে পারে। যদিও তা ব্যয়বহুল। ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান সরবরাহকারী কাতার সরবরাহের জন্য হরমুজ প্রণালী ব্যবহার করে না। ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির বিকল্পও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মত, পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিক উত্তেজনা স্বল্পমেয়াদী মূল্যের উপর প্রভাব ফেলবে। তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ মার্কিন ডলারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত অপরিশোধিত তেলের চাহিদা মেটাতে ৯০ শতাংশ আমদানির উপর নির্ভরশীল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় অর্ধেক বিদেশ থেকে কেনে। যদিও তেল শোধনাগারগুলিতে পেট্রোল এবং ডিজেলের মতো জ্বালানিতে অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার তৈরি এবং গাড়ি চালানোর জন্য সিএনজিতে রূপান্তরিত হয় অথবা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হয়। 

হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগরকে আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানে প্রায় ২১ মাইল (৩৩ কিলোমিটার) প্রশস্ত। জলপথে জাহাজ চলাচলের পথগুলি আরও সংকীর্ণ, প্রতিটি দিকে দুই মাইল প্রশস্ত। যার ফলে জাহাজগুলিতে আক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং যে কোনও সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রণালীটি কৌশলগত এবং অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারস্য উপসাগরের বিভিন্ন বন্দর থেকে তেল ট্যাঙ্কারগুলিকে এই প্রণালী দিয়েই যেতে হয়। বিশ্বের তেল ও গ্যাসের এক পঞ্চমাংশ প্রবাহিত হয় এখান দিয়েই।

মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (EIA)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দৈনিক গড়ে ২০.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ২৯০ মিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ হয়েছিল। সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, ইরান এবং কুয়েত - থেকে তেল রপ্তানির সিংহভাগ এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়েই হয়।

অতীতে, পশ্চিমি দেশগুলি, বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইউরোপ পারস্য উপসাগরীয় জ্বালানি প্রবাহে সবচেয়ে বেশি ব্যাঘাতের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু আজ যে কোনও ব্যাঘাতের ফলে চীন এবং এশিয়াই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। EIA অনুযায়ী, ২০২২ সালে হরমুজ প্রণালী দিয়ে যে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি হয়েছিল তার ৮২ শতাংশ এশিয়ার উদ্দেশ্যে ছিল। ২০২২ এবং ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ভারত, চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় এই জ্বালানির ৬৭ শতাংশ সরবরাহ করা হয়েছিল।