আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়েছিল আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর প্রত্যুত্তর দিতে পারে ইরান। সেই রিপোর্ট প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলা চালাল আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইয়ের দেশ। সোমবার রাতে কাতারে আমেরিকায় আল উদেইদ বায়ু সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। নাম দেওয়া হয়েছে 'অপারেশন বেশারত'। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে সিচুয়েশন রুমে রয়েছেন ইরানের পাল্টা হামলার উপর নজর রাখছেন।

সে দেশের সরকারি চ্যানেলে এই হামলার ঘোষণা করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমেরিকার আগ্রাসনের প্রতি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর এক শক্তিশালী এবং সফল প্রতিক্রিয়া।“

ইরান হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কায় নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল কাতার। তারপরেই এই হামলা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে তারা দেশের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কিছু দেখেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিয়ে এএফপি জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে।

হামলার ঠিক আগে ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান এক্স-এ লিখেছিলেন, "আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি এবং চাইওনি। কিন্তু আমরা মহান ইরানের উপর আক্রমণের কোনও উত্তর না দিয়ে ছাড়ব না।"

?ref_src=twsrc%5Etfw">June 23, 2025

ইরানের হামলার নিন্দা করেছে কাতার। দেশের মুখপাত্র এক্স-এ জানিয়েছেন, "কাতার আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরান রেভলিউশনারি গার্ডের হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। আমরা এটিকে কাতার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, এর আকাশসীমা, আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করি। আমরা নিশ্চিত করছি যে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার কাতারের রয়েছে। আমরা আশ্বস্ত করছি যে কাতারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে আক্রমণ প্রতিহত করেছে এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিহত করেছে। "

?ref_src=twsrc%5Etfw">June 23, 2025

কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "কাতারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আল-উদেইদ কে লক্ষ্য করে হানা সকল ক্ষেপনাস্ত্রকে প্রতিহত করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতায় কোনও প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।'' মন্ত্রকের আরও জানিয়েছে, "কাতারের আকাশসীমা এবং এলাকা সুরক্ষিত। কাতার সশস্ত্র বাহিনী যে কোনও হুমকির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। নাগরিকদের নিরাপদ  স্থানে আশ্রয়ের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।"

কাতারের ভারতীয় দূতাবাস থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে,"বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, কাতারে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিককে সতর্ক থাকার এবং ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। দয়া করে শান্ত থাকুন এবং কাতার সরকারের নির্দেশ মেনে চলুন।"

কাতারে হামলার পর আত্মপক্ষ সমর্থন করে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সচিবালয় থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে আমেরিকার আগ্রাসন এবং নির্লজ্জ কর্মকাণ্ডের প্রত্যুত্তরে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী কাতারের আল-উদেইদ বায়ুসেনা ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। আমেরিকা যে সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা করেছিল, সেই একই সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে ইরানিয় বাহিনী। ইরানের নিশানা কাতারে অসামরিক এলাকা থেকে অনেক দূরে ছিল। এই পদক্ষেপের ফলে আমাদের বন্ধু কাতারের শান্তিপূর্ণ জনগণের জন্য কোনও বিপদবার্তা নয়। ইরান কাতারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।"

দোহার বাইরে অবস্থিত আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০,০০০ সেনা রয়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তম আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি এবং এই অঞ্চল জুড়ে অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলা ওয়াশিংটন এবং তেহরানের মধ্যে চলতে থাকা অচলাবস্থায় একটি বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।