আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের না পৌঁছলে এ বার আর রক্ষা নেই। বাড়িতে অভিভাবকরা ঠিক জেনে যাবেন কখন তাঁদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে আর কখনই বা স্কুল থেকে বার হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা এবং পরিবারের লোকেদের তাঁদের সন্তানদের স্কুলে উপস্থিতির বিষয়টি সময় মতো অবগত করার জন্য মুর্শিদাবাদে প্রথমবারের জন্য কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়ে গেল 'ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম' ব্যবস্থা। 

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা-১ ব্লকে অবস্থিত ৩০ নম্বর আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বিভিন্ন রকম উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিয়ে গোটা জেলাবাসীকে বারেবারে তাক লাগিয়েছেন। প্রায় এক বছর আগে এই স্কুলকে জেলার প্রথম 'ডিজিটাল প্রাথমিক বিদ্যালয়' হিসেবে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন প্রধানশিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত-সহ অন্যান্য শিক্ষকরা। স্কুলের দেওয়ালে লাগানো বিভিন্ন কিউআর কোড স্ক্যান করলেই ছাত্রছাত্রীরা প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ পড়তে পারে। এর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের বোধ তৈরি করার জন্য এই স্কুলেই চালু হয়েছে 'বোন ফোঁটা'। দোলের দিন পথ কুকুরদের গায়ে রং না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতেও দেখা গিয়েছে। আর এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮৫ জন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য চালু হয়ে গেল 'ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম'।

আরও পড়ুন: ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া আর খ্রিস্টান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ নয়, তরতরিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে মুসলিম জনসংখ্যা

আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, 'আমার স্কুলে বর্তমানে ১৮৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। বেশিরভাগই বাড়ি স্কুলের কাছাকাছি হলেও দূরবর্তী অঞ্চলের অনেক অভিভাবকও এই স্কুলের পড়াশোনার মান সম্পর্কে জানার পর তাঁদের ছেলেমেয়েদের আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন।'

তিনি জানান, 'আমার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা স্বার্থেই 'ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম' ব্যবস্থা চালু করা হল।'

বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলের দেওয়ালে লাগানো হয়ে গিয়েছে নতুন যন্ত্র। ছাত্রছাত্রীদের গলায় থাকা 'রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি' পরিচয়পত্র সেই যন্ত্রের সামনে ধরলেই তৎক্ষণাৎ ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা জানতে পেরে যাচ্ছেন ঠিক কোন সময় তাঁর ছেলে বা মেয়ে স্কুলে গিয়েছে। একইভাবে স্কুল ছুটির পরেও প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে ওই মেশিনে তাদের পরিচয়পত্র ঠেকিয়ে বেরোতে হচ্ছে। তার ফলে ঠিক সময়ে বাড়ির লোক জেনে যাচ্ছেন কখন স্কুল থেকে তাঁর ছেলে বা মেয়ে বার হচ্ছে। 

প্রধান শিক্ষক বলেন, 'অনেক সময় আমরা দেখেছি বাড়ি থেকে স্কুলের জন্য বার হয়ে অনেক ছাত্র বা ছাত্রী সময় মতো স্কুলে আসে না। এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা জানতে পারছেন কখন তাঁর ছেলে বা মেয়ে বাড়ি থেকে বার হয়ে স্কুলে ঢুকছে।'
  
হাওড়ার একটি বেসরকারি সংস্থা আণ্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কাজকর্ম সম্পর্কে জানার পর খুব অল্প মূল্যে 'ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স' যন্ত্রটি বসিয়ে দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মাত্র ৩০ টাকা মূল্যের বিনিময়ে 'রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি' পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। 

প্রধানশিক্ষক বলেন, 'নতুন এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাওয়ার ফলে আগামীদিন সমস্ত অভিভাবক জানতে পারবেন কবে এবং কতদিন তাঁর ছেলে বা মেয়ে স্কুলে উপস্থিতি বা অনুপস্থিত থাকে।'

আরও পড়ুন: ধনখড়ের পরে কে বসবেন উপরাষ্ট্রপতির পদে? ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের পরেই স্পষ্ট হবে সব, জানাল কমিশন

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ এলাকার দুই ছাত্রী বাড়ি থেকে স্কুলের জন্য বের হয়ে আর নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছয়নি। পরে তাদের দিল্লির একটি হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়। একই রকমভাবে সম্প্রতি ফরাক্কার একটি স্কুলের পাঁচ ছাত্রী একসঙ্গে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। 

প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, 'বিশেষ পরিচয়পত্র ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে থাকলে তারা স্কুলে এলে বা বেরিয়ে গেলে বাড়ির লোকেরা যে মোবাইল ফোন নম্বরটি আমাদের দিয়েছেন সেই নম্বরে তৎক্ষণাৎ মেসেজ চলে যাবে। তার ফলে কোনও ছাত্রছাত্রী স্কুলের নাম করে বাড়ি থেকে বার হয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার সাহস করবে না।'
 
প্রধান শিক্ষকের কথায়, 'নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে আমাদের পক্ষে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছে বার্তা পাঠানো আরও সহজ হচ্ছে। স্কুলে কোনও বিশেষ বৈঠক বা কোনও ছাত্রের আচরণ সম্পর্কে অভিযোগ থাকলে আগে আমরা সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদেরকে সেটা মৌখিকভাবে জানাতাম। নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে আমরা ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বরে ওই যন্ত্র ব্যবহার করে মেসেজ পাঠিয়ে দিতে পারব। এর ফলে পরিবারের লোকেরা সরাসরি জেনে যাবেন স্কুলে তাঁদের কোনও বৈঠক আছে কি না বা সেই জন্য কবে তাঁদের আসতে হবে।'
 
তবে প্রধানশিক্ষক জানিয়েছেন, 'নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এখনও সমস্ত ছাত্রছাত্রী সড়গড় না হওয়ায় অতি উৎসাহী হয়ে কিছু কিছু ছাত্রছাত্রী বারবার নিজেদের গলায় থাকা পরিচয় পত্র ওই মেশিনের গায়ে ধরছেন। তার ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকের মোবাইলে মেসেজ চলে যাচ্ছে তাঁর সন্তান স্কুলে ঢুকেই সঙ্গে সঙ্গে বার হয়ে গিয়েছে।'
 
তিনি জানান, 'এই অসুবিধা দূর করার জন্য আমরা সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের বলেছি দিনে দু'বারের বেশি এই পরিচয় পত্র যন্ত্রের সামনে নিয়ে গেলে তা আর কাজ করবে না।'