বর্তমানে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সবেতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলদারি। যত সময় যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি। কোথাও আর কৃতিত্ব দেখাতে এক চুলো জায়গা ছাড়ছে না আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। আর এবার নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-চালিত মস্তিষ্কের চিপ বসিয়ে মুখ না নাড়িয়েই ‘কথা বলেছে’ এক বাঁদর! সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমে এমনই দাবি ঘিরে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, খবরটি অতিরঞ্জিত। বাস্তবে এমন কোনও পরীক্ষার প্রমাণ এখনও মেলেনি।

আসলে, এই গবেষণার পেছনে রয়েছে এলন মাস্কের সংস্থা নিউরালিঙ্ক। ২০১৬ সালে স্থাপিত সংস্থাটি মানুষের মস্তিষ্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছে। ২০২১ সালে নিউরোলিঙ্ক জানিয়েছিল, তারা দুটি বাঁদরের মস্তিষ্কে এই চিপ প্রতিস্থাপন করে পরীক্ষা চালিয়েছে। এমনকী এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও-ও শেয়ার করা হয়। আর এখানেই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। 

মূলত সংস্থাটির লক্ষ্য, মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে মানুষ যেন শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমে কম্পিউটার বা যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গত কয়েক বছরে তারা শূকর ও বাদঁরের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ব্রেইন চিপ বসিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল সেই ভিডিও, যেখানে এক বাঁদরকে শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমে ‘পং’ নামের ভিডিও গেম খেলতে দেখা গিয়েছিল।

নিউরালিঙ্ক জানিয়েছে, চিপটি বাদঁরের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের সংকেত পড়ে তা কম্পিউটারে পাঠায়। এই সংকেত বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় বাঁদর কী করতে চায়। তবে এখান থেকে ‘চিন্তা করে কথা বলা’র পর্যায়ে পৌঁছনো এখনও বহু দূরের বিষয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের ভাষা বোঝা বা তৈরি করা একেবারেই জটিল প্রক্রিয়া। মস্তিষ্কের ভাষা-কেন্দ্র থেকে সরাসরি ‘শব্দ’ তৈরি করা এখনও প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ বাঁদর তার মস্তিষ্কের সংকেত দিয়ে কোনও শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করেনি। শুধু নির্দিষ্ট নির্দেশে কম্পিউটার বা যন্ত্র চালিয়েছে।

তবে এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে বিশাল সম্ভাবনার দিক খুলে দিতে পারে। মূলত পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের মনের কথা বুঝতে এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করাই ওই চিপের কাজ। এর নাম দেওয়া হয়েছে টেলিপ্যাথি। যা চিকিৎসাবিদ্যায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিতে পারে। নিউরালিঙ্ক ইতিমধ্যেই মানুষের ওপরও পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে যা আগামী কয়েক বছরে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে নানা ক্ষেত্রে নৈতিক প্রশ্ন উঠছেও শুরু করেছে। প্রাণীর মস্তিষ্কে এভাবে চিপ বসানো কতটা মানবিক? তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এমনকী বাঁদরের মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে, যা নিয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘বানর কথা বলল’ এমন তথ্য বিজ্ঞানসম্মত নয়। তবে গবেষণাটি মস্তিষ্ক-চিন্তা ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। যেখানে ভবিষ্যতে হয়েতো একদিন মানুষ সত্যিই শুধু চিন্তা দিয়েই কথা বলবে।