বিয়ে বা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে থাকা মানুষেরা একে অপরের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নতুন করে বলার নয়। তবে জানেন কি শরীর-স্বাস্থ্যের ওপরও সঙ্গীর ভূমিকা থাকতে পারে? সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনই ইঙ্গিত মিলেছে।

গবেষকদের মতে, স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার খাবারের পছন্দ, দৈনন্দিন রুটিন এবং শারীরিক কার্যকলাপ এতটাই মিলেমিশে যায় যে তা সরাসরি শরীরের ওজন বাড়া বা কমার ওপর প্রভাব ফেলে। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা শুধু মানসিক অবস্থাই নয়, ওজন নিয়ন্ত্রণেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকী সঙ্গীই হয়তো আপনার ওজন বাড়ার প্রধান কারণও হতে পারে, এমনই মত গবেষকদের একাংশের। যা পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত পর্যবেক্ষণ। 
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দম্পতিরা একসঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে খাদ্যাভ্যাসে একই ধরনের প্যাটার্ন তৈরি করেন। একসঙ্গে অফিস শেষে ফাস্ট ফুড খাওয়া, রাতের খাবারের সময় দেরি করা, বা সপ্তাহান্তে বাইরে বেশি খাওয়া-এসব অভ্যাস অজান্তেই দু’জনের শরীরে একই প্রভাব ফেলে।

শুধু খাওয়া নয়, ব্যায়াম বা হাঁটার ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যায়। যদি একজন অলস হন বা নিয়মিত ব্যায়াম এড়িয়ে চলেন, অন্যজনও অনেক সময় সেই একই অভ্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দু’জনের ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়ে যায়। যদি একজন সঙ্গী নিয়মিত ব্যায়াম করেন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহিত করেন, তাহলে অপরজনও সেই অভ্যাস অনুসরণ করেন। এতে ওজন কমানো আরও সহজ হয়।

ভারতে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট। সাম্প্রতিক জাতীয় সমীক্ষা দেখিয়েছে, দেশের প্রায় ২৭ শতাংশ বিবাহিত দম্পতি দু’জনেই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি জেনেটিক নয়, বরং একই জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশগত প্রভাবের ফল। শহুরে দম্পতিদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন-টাইম বৃদ্ধি, অফিসের চাপ, বাইরে খাওয়ার অভ্যাস এবং কম শারীরিক পরিশ্রম ওজন বাড়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রভাবকে বিজ্ঞানীরা বলেন স্বামী-স্ত্রীর শরীরের গঠন বা স্বাস্থ্যগত অবস্থায় মিল।

তবে এক্ষেত্রে অবশ্য দায়ী কেউ নন। সম্পর্কের স্বাভাবিকতা থেকেই এই অভ্যাসের মিল গড়ে ওঠে। গবেষকরা বলছেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে দম্পতিরা বরং একে অপরের সহযোগী হতে পারেন।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট একসঙ্গে হাঁটুন, বাইরে খাবার কমিয়ে ঘরের স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ঘুমের সময় ঠিক রাখুন, অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস কমান, পরস্পরকে উৎসাহ দিন।

দম্পতিরা যদি একত্রিতভাবে লাইফস্টাইল বদলাতে পারেন, তাহলে স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধির সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। সম্পর্কের শক্তিই তখন হয়ে ওঠে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।