আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স ৩৮ কিন্তু থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। এমন কাণ্ড ঘটিয়েই শিরোনামে উঠে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার ৩৮ বছর বয়সি এক নারী। নাম মিস ইয়াং। অল্প বয়সেই সব ছেড়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধদের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তেই ভাইরাল হয়েছেন তিনি।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত? তরুণী জানিয়েছেন, প্রেমের টানে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পরেই সম্পর্ক ভেঙে দেন প্রেমিক। তাড়িয়ে দেন বাড়ি থেকে। গৃহহীন অবস্থায় এয়ার বিএনবি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন তিনি। একদিকে সম্পর্ক ভাঙার বেদনা, অন্যদিকে টানা দু’মাস ভাড়া বাড়িতে থাকার অর্থনৈতিক চাপ। কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। এই অবস্থায় স্থায়ী সমাধানের খোঁজে তিনি তাঁর পিসির কাছে যান পরামর্শ চাইতে। ঘটনাক্রমে তাঁর পিসি থাকেন একটি রিটায়ারমেন্ট হোম বা বৃদ্ধাশ্রমে।
আরও পড়ুন: ‘স্তনদুগ্ধ আইসক্রিম’ খেতে হুড়োহুড়ি বড়দেরও! কত দাম? কোথায় পাওয়া যাবে এই স্বাদ?
তখন পিসিই তাঁকে পরামর্শ দেন, যাতে তিনি সেই বৃদ্ধাশ্রমে থেকে যান। ইয়াং প্রথমে দ্বিধায় পড়েন। একে তো বয়সের সীমা। অন্যদিকে এমন বৃদ্ধ মানুষদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে কি না তাই নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৃদ্ধাশ্রমে পিসির পাশের ঘরটিতে থাকতে চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
আরও পড়ুন: একবার লাগালেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলবে! থ্রি ডি প্রিন্টারে কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা
ইয়াং ভেবেছিলেন তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হবে না। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে, ছয় সপ্তাহ পর তাঁর আবেদন মঞ্জুর হয়ে যায়। তিনিও দ্বিধা সরিয়ে রেখে সেখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। পড়শিদের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট হলেও, ইয়াং জানান, এই সিদ্ধান্ত তাঁকে শান্তি এনে দিয়েছে। পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রম অনেক সাশ্রয়ী। ব্যস্ত শহুরে জীবনের ইঁদুরদৌড়ের মাঝে এই আশ্রয় যেন এক ধীর গতির নীড়। আর এহেন তাড়াহুড়োহীন জীবনই তিনি চাইছিলেন। জীবনের এক অস্থির অধ্যায়ের মাঝে এমন সাদামাটা গতিহীন জীবনই তাঁর মনকে শান্ত করেছে।
ইয়াং-এর দাবি, এই বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর তিনি যেন একটি বড় পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছেন। যেদিন প্রথম আসেন সেদিনই বৃদ্ধ প্রতিবেশীরা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এমনকী দুই বয়স্ক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে তাঁর বিছানা এবং টিভি স্ট্যান্ড জোড়া লাগিয়ে দেন বলেও জানিয়েছেন ইয়াং।
প্রবীণদের মাঝে বাস করা যেন শাপে বর হয়েছে ইয়াং-এর জন্য। শান্ত পরিবেশ তাঁর মনকে শান্তি দিয়েছে, আবার শহরের দৌড়ঝাঁপ কিংবা সর্বক্ষণ প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত নেই সেখানে। এই ধীর গতির জীবন তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাঁকে আরও শান্ত এবং মনোযোগী করেছে। প্রাথমিক ভাবে যাকে অস্থায়ী বাসা ভেবেছিলেন, সেটাই এখন হয়ে উঠেছে তাঁর সত্যিকারের প্রিয় বাসস্থান। আর এই সবকিছুই তিনি পাচ্ছেন অত্যন্ত কম খরচে। যেখানে শহরে বাড়িভাড়া করে থাকতে তাঁর মাসে ২০০০ ডলার খরচ করতে হত, সেখানে মাত্র ৩০০ ডলারে বৃদ্ধাশ্রমে থাকছেন তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ইয়াং জানিয়েছেন। এখন তাঁর সকাল শুরু হয় রেকর্ড প্লেয়ার থেকে ভেসে আসা পুরনো দিনের গান শুনে। তারপর কফি খান, যোগব্যায়াম করেন কিংবা সাইকেল চালান। আবার কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় বৃদ্ধাশ্রমের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা, ছোটখাটো খেলাধুলা কিংবা গান গেয়ে সময় কাটে।
রিটায়ারমেন্ট হোমে থাকার পর থেকে বার্ধক্য নিয়েও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে ইয়াং-এর। প্রাণবন্ত ও সুখী প্রবীণদের মাঝে থেকে তিনি আর বয়স বেড়ে যাওয়ার ভয় পান না। বরং, এখন তিনি বার্ধক্যকে জীবনের এক আনন্দময় ও অর্থবহ অধ্যায় বলে মনে করেন। তাঁর কথায়, “এটি এক ধরনের আশ্রয়স্থল, একটি জায়গা যা নতুন করে শান্তি ও আত্মীয়তার অনুভূতি দেয়।”
