আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলেন? অনেকেই এই অভ্যাসকে ‘অদ্ভুত’ বলে দাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নিজের সঙ্গে কথা বলা কিংবা সেলফ-টক—এটি মোটেও কোনও অস্বাভাবিক অভ্যাস নয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, এটি এমন এক শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি যা মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ, স্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা যখন নিজের সঙ্গে কথা বলি—হোক তা উচ্চস্বরে কিংবা মনে মনে—তখন মস্তিষ্কের ভাষা এবং যুক্তি-সম্পর্কিত অংশ সক্রিয় হয়, ফলে জটিল বা বিশৃঙ্খল চিন্তাগুলোকে সহজভাবে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কাউন্সেলর এবং মাইন্ডওয়েল কাউন্সেলের প্রতিষ্ঠাতা অর্চনা সিংহলের মতে, সেল্ফ-টকের অন্যতম বিশেষ উপকার হল মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় পুরুষে নিজের সঙ্গে কথা বলে—যেমন, “তুমি পারবে” বা নিজের নাম ধরে নিজেদের উদ্দেশ্যে কথা বলে—তখন নিজের আবেগ থেকে সামান্য দূরে সরে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় চলে যায়। এই দূরত্ব উদ্বেগ কমায়, স্নায়ুকে শান্ত করে এবং মস্তিষ্ককে আরও কার্যকর সমস্যা সমাধানের অবস্থায় নিয়ে যায়।

অর্চনা সিংহল আরও বলেন, সেল্ফ-টক ভিতরের শক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ইতিবাচক, আশ্বস্তকর বাক্য নেতিবাচক চিন্তাকে থামায় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি নতুনভাবে বুঝতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ইতিবাচক সেল্ফ-টক আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, কর্মদক্ষতা উন্নত করে এবং বিশেষত চাপের মুহূর্তে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। অনেকের কাছে এটি এমন এক অভ্যাসে পরিণত হয়, যা তাদের মূল্যবোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করে।

অর্চনার মতে, সেল্ফ-টকের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পরিষ্কার বোঝাপড়া তৈরি হওয়া। অনুভূতি, ধারণা বা সিদ্ধান্তগুলো উচ্চারণ করার ফলে চিন্তার গতি স্বাভাবিকভাবেই ধীর হয়, এবং মস্তিষ্ক কোন বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি তা নির্ধারণ করার সুযোগ পায়। এটি অনেকটা ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলার মতো, তবে এই ক্ষেত্রে আপনি নিজেকেই নিজের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারেন।

আজকের দ্রুতগতির জীবন, অবিরাম ব্যস্ততা এবং মনোজগতের অস্থিরতার ভিড়ে অর্চনা সিংহল মনে করেন—সেল্ফ-টক এক সহজলভ্য ও অত্যন্ত কার্যকর মানসিক-স্বাস্থ্য অনুশীলন। সচেতনতা ও সহানুভূতির সঙ্গে যদি এটি চর্চা করা যায়, তবে তা আবেগের স্বচ্ছতা আনে, উদ্বেগ কমায় এবং দৈনন্দিন চাপের মাঝেও মানুষকে নিজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করে।