আজকাল ওয়েবডেস্ক: মনখারাপের বিকেলে বা প্রবাসে একা লাগলে সবার আগে যাঁর কথা মনে পড়ে, তিনি মা। ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসা তাঁর কণ্ঠস্বর যেন এক মুহূর্তে সব উদ্বেগ, সব চিন্তা ধুইয়ে দেয়। কবি সাহিত্যিকরা হয়তো বলবেন, মায়ের গলায় বুঝি কোনও জাদু আছে। নিছক সাহিত্য নয়। এই ধারণা কিন্তু একেবারে ভুল নয়। বিজ্ঞানও এবার সেই ধারণাকেই স্বীকৃতি দিল।

স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের এক নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, মায়ের কণ্ঠস্বর অপরিণত বা প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। গত ১৩ অক্টোবর ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স’ নামক বিজ্ঞান পত্রিকায় এই যুগান্তকারী গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় কী জানা গেল?
সাধারণত, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায় না। গর্ভে থাকাকালীন শেষ কয়েকটি সপ্তাহ মস্তিষ্কের স্নায়ু সংযোগ এবং পথ তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরিণত শিশুরা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা পায় না।
গবেষকরা নির্দিষ্ট সময়ের আট সপ্তাহেরও বেশি আগে জন্মানো ৪৬টি শিশুর উপর এই পরীক্ষা চালান। তাদের মায়েরা নিজেদের মাতৃভাষায় ‘প্যাডিংটন বেয়ার’ নামক একটি গল্পের বইয়ের একটি অধ্যায় পাঠ করে রেকর্ড করেন। সেই রেকর্ডিং প্রতিদিন প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে ওই অপরিণত শিশুদের শোনানো হয়। এরপর এমআরআই স্ক্যান করে যা দেখা গেল, তা এককথায় অবিশ্বাস্য।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?
ফলাফলে দেখা যায়, যে শিশুরা মায়ের রেকর্ড করা কণ্ঠ শুনেছে, তাদের মস্তিষ্কে বিকাশের লক্ষণ অনেক বেশি স্পষ্ট। স্ক্যানে ধরা পড়ে, ওই শিশুদের মস্তিষ্কের ‘হোয়াইট ম্যাটার’-এর বিকাশ অনেকটাই পরিণত। বিশেষত, মস্তিষ্কের বাম দিকের ‘আর্কুয়েট ফ্যাসিকুলাস’ নামক অংশটির বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। এই অংশটিই ভাষা বুঝতে ও বলতে সাহায্য করে। এরপরেই গবেষকরা অপরিণত শিশুদের অভিভাবকদের যত বেশি সম্ভব সন্তানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন।
গবেষক দলের প্রধান, স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ক্যাথরিন ট্র্যাভিস বলেন, “এই প্রভাব কতটা শক্তিশালী, তা দেখে আমি নিজেই অবাক। এত কম বয়সেই যে মস্তিষ্কের বিকাশে এমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে হাসপাতালে আমরা যা করছি, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে তার সঙ্গে কথা বলা যে কতটা জরুরি, তা এই গবেষণা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।”
এই গবেষণা প্রমাণ করে যে, কথা বলার ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী। এমনকী এমন অপরিণত বয়সেও তা শিশুর মস্তিষ্কে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন আনতে পারে। অর্থাৎ, মায়ের কণ্ঠস্বর শুধুমাত্র মানসিকভাবে শান্তি দেয় না, বরং জৈবিকভাবেও শিশুর বিকাশে সাহায্য করে। মায়ের গলার আওয়াজ আক্ষরিক অর্থেই শিশুর মস্তিষ্ককে গড়ে তোলে। ফলে মায়ের আদর যত্ন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।