অফিসে কাজ করতে করতে অনেক সময় বিরক্তি, ক্লান্তি বা একঘেয়েমি আসে। সাদা, ধূসর বা নিস্তেজ দেওয়াল, একরঙা আলো আর চুপচাপ পরিবেশে প্রতিদিন আট-ন’ঘণ্টা কাটানো মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে। আজকাল যে কোনও অফিসে মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ থাকে। ফলে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন কর্মীরা। সঙ্গে অফিস ডিজাইন ঠিক না থাকলে মেজাজ আরও বিগড়ে থাকে। কিন্তু জানেন কি কাজের জায়গার রং, আলো, গাছপালা বা সাজসজ্জাও আপনার মুড, কাজের মান এমনকী মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। হ্যাঁ, এমন পরিস্থিতি বদলে দিতে এসেছে এক নতুন ট্রেন্ড ‘ডোপামিন ডেকর’। এটি এমন এক স্টাইল যেখানে রং, আলো ও প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে কর্মস্থলকে সাজানো হয়। এতে মন ভাল থাকে, কাজের অনুপ্রেরণা বাড়ে, আর কাজের জায়গা যেন হয়ে ওঠে 'হ্যাপি স্পেস'। এই নতুন সাজের মূল উদ্দেশ্যই হল মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন’ নামের হ্যাপি হরমোনের উৎপাদন বাড়ানো। ডোপামিন বাড়লে মন ভাল থাকে, কাজের আগ্রহ ও শক্তি দুটোই বাড়ে। মাত্র কয়েকটি সাধারণ পরিবর্তন করে কীভাবে অফিসের পরিবেশ পুরোপুরি বদলে দেবেন, জেনে নিন- 

১. রঙের জাদু ব্যবহার করুনঃ অফিসে একঘেয়ে ধূসর বা বেজ রঙের যুগ শেষ। তার বদলে ব্যবহার করুন প্রাণবন্ত কিন্তু চোখের আরামদায়ক রং। এক পাশে টারকোয়েজ, টিল বা সেজ গ্রিন রঙের অ্যাকসেন্ট ওয়াল বানাতে পারেন। সেখানে উজ্জ্বল হলুদ বা করাল রং মেশালে জায়গা হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত। তবে পুরো অফিসে উজ্জ্বল লাল বা খুব গাঢ় রং ব্যবহার না করাই ভাল। এগুলো চোখকে ক্লান্ত করে দেয়। রিসেপশনে রঙিন অ্যাকসেন্ট ওয়াল রাখলে অতিথিদের আকর্ষণ বাড়বে। আর ওয়ার্কস্টেশন এলাকাগুলো রাখুন সফট নিউট্রাল টোন। 

আরও পড়ুনঃ শুধু জয়েন্টে ব্যথা নয়, ইউরিক অ্যাসিডের দাপটে নষ্ট হতে পারে দৃষ্টিশক্তি! জানেন চোখের কোন মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ে?

২. অফিসের মধ্যে প্রাকৃতিক ছোঁয়া আনুনঃ গাছপালা শুধু সাজসজ্জার জন্য নয়, মানসিক প্রশান্তি ও বাতাসের মান উন্নত করতেও কার্যকর। অফিসে রাখুন ‘স্নেক প্ল্যান্ট’ বা ‘রাবার প্ল্যান্ট’যা বাতাস বিশুদ্ধ রাখবে। দেওয়ালে ছোট হ্যাঙ্গিং পটস বা পোথোস গাছ ঝোলাতে পারেন। আলো ও বাতাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে মানানসই পর্দা ব্যবহার করুন। এছাড়া লাউঞ্জ বা রেস্ট জোনে একটি বড় পাম গাছ ও নরম আলো রাখলে জায়গা হয়ে উঠবে আরামদায়ক ও রিফ্রেশিং।

৩. কাজের জায়গায় আনুন খানিকটা খেলাধুলার মজাঃ অফিস মানেই গম্ভীর পরিবেশ নয়। একটু রঙিন, সৃজনশীলভাব যোগ করলে কাজের আগ্রহ বেড়ে যায়। রিসেপশন এলাকায় টেরাকোটা প্যানেলিং দিতে পারেন। দেওয়ালে ট্যাপেস্ট্রি বা আর্টওয়ার্ক রাখুন। কর্মীদের জোনে রঙিন বসার জায়গা, সিলিং বা প্যানেলে মজার ডিজাইন বা উজ্জ্বল রঙের ছাঁয়ায় অফিসে 'এনার্জি' ফিরে আসে।

৪. টেকসই ও পরিবর্তনযোগ্য ডিজাইন বেছে নিনঃ আজকাল অফিস শুধু ফ্যাশনেবল হলেই চলবে না, হতে হবে সময়োপযোগী ও টেকসই। তাই ব্যবহার করুন মডুলার ফার্নিচার যা সহজেই সরানো বা 'রিইউজ' করা যায়। পরিবেশবান্ধব বাঁশ, কর্ক বা রিক্লেইমড কাঠের মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন। ক্যাফেটেরিয়ায় বা ব্রেক জোনে ‘লাইভ গ্রিন ওয়াল’ বানালে অফিস বেশ প্রাণবন্ত দেখাবে।

৫. কর্মীদের প্রয়োজন অনুযায়ী জায়গা সাজানঃ সব কর্মীর প্রয়োজন এক নয়। তাই জায়গাগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলুন। মনোযোগের কাজের জন্য রাখুন শান্ত, হালকা আলোয় ভরা জোন। তরুণ কর্মীদের জন্য দিন রঙিন মডুলার সিটিং স্পেস বা 'কোলাব জোন'। লাউঞ্জ বা কফি কর্নারে রাখুন পরিবর্তনযোগ্য রঙের লাইট যা বিকেলের দিকে মেজাজ বদলে দিতে পারে।