রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো তরুণ তুর্কিদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যাও আজকাল আর খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। ইউরিক অ্যাসিড হল একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ যা শরীর পিউরিন নামক উপাদান ভেঙে তৈরি করে।ইউরিক অ্যাসিড সাধারণত রক্ত ​​এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বার হয়ে যায়। কিন্তু শরীর যখন খুব বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে বা কিডনি যথেষ্ট পরিমাণে বার করতে পারে না, তখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলে। এই সমস্যাকেই সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া বলে। এদিকে সময় থাকতেই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে না রাখলে বাড়তে পারে একাধিক শারীরিক সমস্যা। সেক্ষেত্রে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয়। যা চিহ্নিত করতে পারলেই প্রাথমিক অবস্থাতে জটিলতা এড়াতে পারবেন। 

  • গাঁটে ব্যথা ও ফোলাভাব: ইউরিক অ্যাসিডের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল গাঁটে ব্যথা ও ফোলাভাব। বিশেষ করে পায়ের বড় আঙুল, হাঁটু বা গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। 
  • অস্থিসন্ধিতে লালচেভাব ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি: প্রদাহের কারণে অস্থিসন্ধিতে লালচে ভাব হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে তাপমাত্রাও বাড়তে পারে।
  • রাতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা: গাউটের ব্যথা সাধারণত রাতের দিকে বেশি দেখা যায়। হাত-পায়ের আঙুল বিশেষ করে বুড়ো আঙুল, গোড়ালি, হাঁটু বা কনুইয়ের জয়েন্টগুলোতে রাতে আচমকা তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না অসুখবিসুখ, ঘন ঘন বিগড়ে যায় মেজাজ? শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক আছে তো!

  • প্রস্রাবে জ্বালা বা কিডনিতে পাথর – ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে। সেক্ষেত্রে পিঠের নিচের দিকে বা পাশে, তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ার লক্ষণ দেখা দিলে কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা যাচাই করে নিন।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা – শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেশি হলে এনার্জি কমে যায়। এছাড়াও রক্তচাপ বেড়ে গেলে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, এমনকী ঘন ঘন ক্লান্তিও দেখা যায়।
  • টোফি: হাত ও পায়ের আঙুলের জয়েন্ট, কনুই, কানের লতি বা অন্যান্য স্থানে ছোট ছোট সাদা বা হলুদ রঙের পিণ্ড দেখা দিলে টোফি বলা হয়। টোফাস শব্দ থেকে আসা টোফির লাতিন ভাষায় অর্থ হল ছোট পাথর। এক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিড  ত্বকের নিচে জমাট বেঁধে যায় এবং দৃশ্যমান হয়। দীর্ঘদিন ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ত্বকের নিচে গিঁট তৈরি হয়।
  • খিদে কমে যাওয়া ও হালকা জ্বর – ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে প্রদাহের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হালকা জ্বর হতে পারে।


পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ইউরিক অ্যাসিডের সম্ভাবনা বাড়ে। যারা নিয়মিত রেড মিট খান তাঁদের শরীরে দ্রুত ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে চিংড়ি, কাঁকড়া এসব সিফুড খাওয়া চলবে না। এছাড়াও মুসুর ডাল, মটর ডাল, ছোলার ডাল, পালং শাক, ফুলকপি, মাশরুম খানিকটা নিয়ম করে খেতে হবে। বাদ দিতে হবে যে কোনও বাজার চলতি প্রক্রিয়াজাত খাবার, ঠান্ডা পানীয়। এছাড়াও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে অ্যালকোহলও সচেতনভাবে বাদ দিতে হবে।