শীতকাতুরে দিন হোক বা প্রচণ্ড গরম—অনেকেরই বাড়ি ফিরে ফ্রিজ খুলে বরফ-ঠান্ডা জল খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের জন্য এই অভ্যাস বিপজ্জনক হতে পারে। ঠান্ডা জল শরীরের রক্তনালিতে তৎক্ষণাৎ প্রভাব ফেলে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করায়—যা আগে থেকেই হৃদসংক্রান্ত সমস্যায় ভোগা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
হৃদরোগীদের জন্য কেন বিপজ্জনক বরফ-ঠান্ডা জল?
কার্ডিয়াক সার্জন ড. স্বরূপ স্বরাজ পাল জানিয়েছেন, ঠান্ডা জল পান করলেই রক্তনালিতে সঙ্কোচন তৈরি হয়। ফলে রক্তনালির পথ সরু হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচল কঠিন হয়। এর ফলেই হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এতে সাময়িকভাবে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদরোগ কিংবা হাইপারটেনশন থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
তিনি আরও জানান, ঠান্ডা জল ভেগাস নার্ভকে উদ্দীপিত করতে পারে, যে নার্ভ হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। হঠাৎ বরফ-ঠান্ডা জল সেই নার্ভে প্রভাব ফেললে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
বরফ-ঠান্ডা জলে অন্য ঝুঁকিও
মরশুম যাই হোক না কেন, অতিরিক্ত ঠান্ডা জল পান করলে গলা ব্যথা, কাশি এবং সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে এতে শরীরে হঠাৎ চাপ পড়ে—যা মোটেই নিরাপদ নয়।
কী করবেন হৃদরোগীরা?
ফ্রিজের জল নয়, ঘরের তাপমাত্রার জল পান করুন
অতিরিক্ত ঠান্ডা জল সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন
দিনে কমপক্ষে ২–৩ লিটার জল পান করুন
চাইলে লেবু জল বা গ্রিন টি খেতে পারেন—রক্তসঞ্চালন ভাল হবে
ফ্রিজ খুলে বরফ-ঠান্ডা জলের দিকে হাত বাড়ানোর আগে তাই সাবধান হোন—বিশেষ করে আপনার যদি আগে থেকেই হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে, তাহলে এই একটি অভ্যাসও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাইরে থেকে দেখতে একেবারে নিরীহ এই অভ্যাসটা আসলে শরীরের ভিতরে এমন প্রতিক্রিয়া ঘটায় যা অনেক সময় কল্পনাও করা যায় না। বিশেষ করে, যাঁদের হার্টের সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বরফ-ঠান্ডা জল যেন ধীরে ধীরে চাপ বাড়াতে থাকা এক নীরব বিপদ। ঠান্ডা জল সরাসরি রক্তনালীর সঙ্কোচন ঘটায়, হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করায়, আর তার ফলস্বরূপ বাড়ে ঝুঁকি। তাই শুধু শরীরের আরাম নয়—স্বাস্থ্যগত বাস্তবতা বুঝে চলাই এখন সময়ের দাবি।
