বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অন্যতম শক্তিশালী দেশ জার্মানিতে। সেখানেই উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা। চলতি বছরে সেদেশের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৬০০ মানুষের স্থায়ী আবাসন নেই। এই সংখ্যা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় রাত কাটাতে হয় অসংখ্য মানুষকে। অসহায় গৃহহীনদের জন্য এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানি। বেশ কয়েক বছর ধরে সেদেশের উল্ম শহরে গৃহহীন মানুষদের জীবন রক্ষা করতে শুরু হয়েছে এক অনন্য উদ্যোগ।
প্রযুক্তি ও মানবিকতার মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে ‘উল্মার নেস্ট’। একদল স্থানীয় ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ার ও সমাজকর্মীর যৌথ প্রচেষ্টায় এই বিশেষ ঘুমানোর ক্যাপসুল তৈরি করা হয়েছে। যা সৌরশক্তি দ্বারা চালিত এবং শীতের রাতে গৃহহীনদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ পোষ্যকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চান? কোন কোন বিষয় মাথায় রাখলে দুর্দান্ত কাটবে ছুটির দিন?
কেন প্রয়োজন হলো ‘উল্মার নেস্ট’? ইউরোপের শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় হাড়কাঁপানো স্তরে। গৃহহীন মানুষেরা খোলা আকাশের নিচে বা সেতুর তলায় রাত কাটাতে গিয়ে প্রায়ই জীবনহানির ঝুঁকিতে থাকেন। যদিও শহরগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, তবুও অনেক গৃহহীন ব্যক্তি সেখানে যেতে চান না। কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা, গোপনীয়তার অভাব, পোষা প্রাণী নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা। আর এই সব সমস্যার বিকল্প হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে উল্মার নেস্ট। যা এখন জরুরি আশ্রয় হিসেবে কাজ করছে।
উল্মার নেস্টের বৈশিষ্ট্য ঠিক কী? ক্যাপসুলটি সম্পূর্ণ শীতনিরোধক ও আবহাওয়াবান্ধব। ফলে ঠান্ডা, তুষারপাত, বৃষ্টি কিংবা ঝোড়ো হাওয়া থেকেও সুরক্ষা পাওয়া যায়। এতে রয়েছে সৌরপ্যানেল, যা ভেতরে আলো জ্বালানো, গরম রাখার ব্যবস্থা এবং বায়ুচলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবহারকারীরা ভেতর থেকে দরজা লক করতে পারেন। এটি তাঁদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।
সেন্সরের মাধ্যমে ক্যাপসুলের ভেতরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মাপা যায়। এমনকী ব্যবহারের তথ্য সমাজকর্মীরা পেয়ে যান, তবে এতে গোপনীয়তা নষ্ট হয় না। এর আকার ছোট ও হালকা, ফলে সহজেই শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা যায়।
২০১৯-২০২০ সালের শীতকাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্রকল্প। যা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছে এই উদ্যোগ। স্থানীয় প্রশাসনও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের 'নেস্ট' আরও শহরে স্থাপন করা যেতে পারে। অনেক সমাজকর্মীর ভাষায়, “গৃহহীন মানুষের জন্য এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, তবে প্রাণ বাঁচানোর জন্য কার্যকর জরুরি ব্যবস্থা।”
