বাইরে হালকা কুড়মুড়ে ময়দার পরত, ভিতরে নরম আর মশলাদার আলুর পুর। তার সঙ্গে একটু দই বা মাখন— শীতের সকালে আলুর পরোটা অনেকেরই ‘কমফর্ট’ ব্রেকফাস্ট। গরমে হালকা জলখাবার খেলেও, ঠান্ডায় এই খাবার প্রায়ই পাতে থাকে।

কিন্তু এই আলুর পরোটা যদি আপনি রোজ সকালে খেতে শুরু করেন, তাহলে শরীরে তার কেমন প্রভাব পড়ে? এটা কতটাই বা স্বাস্থ্যকর? আজকাল এই প্রশ্নগুলো খুব ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে। তাই রোজ আলুর পরোটা খাওয়া শরীরের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে এটিকে ব্যালান্স করে আরও স্বাস্থ্যকর করা যেতে পারে, তা জেনে নিন।

স্বল্পমেয়াদে এনার্জি, তবে দীর্ঘমেয়াদে বাড়তে পারে ঝুঁকি

আলুর পরোটা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, তাই এটি খাওয়ার পর তৎক্ষণাৎ এনার্জি মেলে। জলখাবারে খেলে কয়েক ঘণ্টা পেট ভরা থাকে, খিদেও কম পায়। কিন্তু যদি এটি রোজকার অভ্যাস হয়ে যায়, তাহলে ছবিটা কিছুটা বদলে যায়।

নিয়মিত হাই-কার্বযুক্ত জলখাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। শরীর অবশ্যই এনার্জি পায়, কিন্তু সেই এনার্জি খুব তাড়াতাড়ি ‘ক্র্যাশ’ করে, ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লান্তি, ঘনঘন খিদে পাওয়া—এমন সব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে রোজ আলুর পরোটা খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে, কারণ এতে তেল, ঘি বা মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে। অনেক দিন ধরে যখন শরীর উচ্চ ক্যালোরি এবং ফ্যাট পায়, তখন তা শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমতে থাকে। বহু বিখ্যাত পুষ্টিবিদের মতে, নিয়মিত আলু পরোটা খাওয়ার ফলে টাইপ–২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হার্ট সম্পর্কিত ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বসে থাকা লাইফস্টাইলে ক্ষতি আরও বেশি

আজকাল অনেকেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা খুব কম হাঁটাচলা করেন। এমন মানুষ যদি রোজ আলুর পরোটা খান, তাহলে শরীর সেই এনার্জি খরচ করতে পারে না এবং তা ফ্যাট হিসাবে জমে যায়।

হাই-কার্ব জলখাবারে ব্লাড সুগার দ্রুত স্পাইক হয়, আর শারীরিক কাজ কম হলে মেটাবলিজমও ধীরে চলে। এর ফলে শরীরের কাজের ক্ষমতা কমে যায় এবং ওজন দ্রুত বাড়তে পারে। রোজ সকালে আলুর পরোটা খেয়ে কিছু সময়ের জন্য এনার্জি মিললেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্লান্তি, ক্রেভিং ও লো-এনার্জি অনুভব হতে পারে। এই প্যাটার্ন মাসের পর মাস চললে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং হার্টের সমস্যা বাড়তে পারে।

আলু পরোটা কীভাবে খাচ্ছেন, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ

আলুর পরোটার সঙ্গে কী খাচ্ছেন সেটাও সমান জরুরি। দই, স্যালাড, আচার বা তরকারির সঙ্গে খেলে হজম একটু ধীরে হয় এবং ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণে থাকে। দইয়ে প্রোটিন, আর সবজিতে ফাইবার থাকে—যা এই ভারী জলখাবারকে ব্যালান্স করে দেয়।

কিন্তু যদি এর সঙ্গে মাখন, অতিরিক্ত তেল বা চিনিযুক্ত চা খাওয়া হয়, তাহলে ক্যালোরি এবং ফ্যাট দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেকে পরোটার উপর অতিরিক্ত এক চামচ ঘি দেন—যা মোট ক্যালোরি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
তার বদলে মাল্টিগ্রেন আটা, কম তেল এবং হালকা পুর দিয়ে তৈরি পরোটা খেলে তা অনেকটাই স্বাস্থ্যকর হতে পারে।