মানবদেহের বার্ধক্য থামানো বা উল্টে দেওয়ার ধারণা এতদিন ছিল কল্পবিজ্ঞানের বিষয়। কিন্তু এবার সেই ধারণাই যেন বাস্তব হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি রেট্রো বায়োসায়েন্সেস, যা স্যাম অল্টম্যানের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত, সেটি প্রাথমিক পরীক্ষায় এমন এক বৈপ্লবিক সাফল্য পেয়েছে যা বিজ্ঞান জগতে তুমুল আলোড়ন তুলেছে। বয়স্ক মানব কোষকে পুনরায় 'নবজাতকের মতো তরতাজা' অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। এই রি-প্রোগ্রামিং প্রযুক্তির মূল ভিত্তি নোবেলজয়ী শিনিয়া ইয়ামানাকার আবিষ্কৃত ইয়ানাকা ফ্যাক্টরস, যেগুলো পুরনো কোষকে রিসেট করে বয়স মুছে দিতে পারে।

এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সাফল্য হল, এটি শুধু কোষের বাইরের চেহারায় সামান্য পরিবর্তন আনে না, একইসঙ্গে ডিএনএ–র গভীরে জমে থাকা বয়সের দাগও মুছে ফেলে। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষে যে ক্ষয় ও ত্রুটি জমতে থাকে, তা বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। রেট্রোর প্রযুক্তি সেই ক্ষয় সারিয়ে কোষকে তার প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, এই প্রক্রিয়ায় কোষের পরিচয় বদলে যাচ্ছে না। অর্থাৎ একটি পেশির কোষ পেশির কোষই থাকছে, মস্তিষ্কের কোষ তার মূল পরিচয় বজায় রাখছে। শুধু তাদের বয়স কমানো হচ্ছে অত্যন্ত নিরাপদ ও নির্ভুলভাবে।

এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বড় ভূমিকা রেখেছে। রেট্রোর বিজ্ঞানীরা এআই–এর মাধ্যমে ইয়ামানাকা ফ্যাক্টরসের উন্নত সংস্করণ তৈরি করেছেন, যা আগের তুলনায় ৫০ গুণ বেশি কার্যকর। এর ফলে কোষকে অনেক দ্রুত, স্বল্প ক্ষতিতে ও নিখুঁতভাবে পুররুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। তারা এই প্রযুক্তিকে এমনভাবে উন্নত করেছেন যাতে কোষ আবার স্টেম সেলে পরিণত না হয় যা একসময় বড় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হত।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করছেন, এই সাফল্য ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। অ্যালঝাইমার্স, পারকিনসন, হৃদরোগ, পেশি দুর্বলতা, ডায়াবেটিস সহ বয়স-সম্পর্কিত রোগগুলো একসময় হয়তো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। মস্তিষ্ক ও পেশির কোষ যদি আবার তরুণ বয়সের শক্তি ফিরে পায়, তবে বৃদ্ধ বয়সেও মানুষ সুস্থ, কর্মক্ষম ও শক্তিশালী থাকতে পারবে। এমনকী মানবজীবনের আয়ুও বেড়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল বয়স ধীর করার প্রযুক্তি নয়, বরং বয়সকে 'রিসেট' করার নতুন যুগের সূচনা। মানব কোষকে শৈশবের মতো অবস্থায় ফেরানোর এই সাফল্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভবিষ্যতে জৈবিক অমরত্বও আর কল্পকাহিনি নাও থাকতে পারে। যদিও এখনও এবিষয়ে অনেক গবেষণা বাকি, অনেক পরীক্ষা প্রয়োজন, তবে রেট্রো বায়োসায়েন্সের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে বার্ধক্যবিরোধী বিজ্ঞানে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।