প্রত্যেক জীবের মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যু ঠিক কবে কিংবা কীভাবে আসবে, তা আমরা কেউ জানি না। যখন-যেভাবেই আসুক, মৃত্যু একদিন আসবেই। তবে পৃথিবীতে জন্ম নিলে মৃত্যুও একসময় অবধারিত, এই ধারণাকে যেন মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে এক সামুদ্রিক প্রাণী। হ্যাঁ, প্রকৃতিতে রয়েছে এক আশ্চর্য প্রাণী, যার ‘অমর’ হয়ে ওঠার ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়েছে। আক্ষরিক অর্থেই এরা নিজেদের প্রায় ‘অমর' করে রেখেছে। মৃত্যুর কোনও রকম আশঙ্কা থাকলে, বার্ধক্যের উল্টো পথ ধরে এই প্রাণী।

পৃথিবীর একমাত্র 'চিরজীবী' প্রাণী হল  টারিটোপসিস ডোরনি। যাকে ব্যাকওয়ার্ড এজিং জেলিফিশ নামে ডাকেন বিজ্ঞানীরা। আসলে জেলিফিশের জীবন শুরু হয় ক্ষুদ্র পলিপ অর্থাৎ শৈশব অবস্থা হিসেবে, তারপর ধীরে ধীরে পূর্ণবয়স্ক মেডুসা রূপ নেয়। অন্য প্রাণীরা এই ধাপ অতিক্রম করলে একসময় বার্ধক্য ও মৃত্যু আসে। কিন্তু টারিটোপসিস ডোরনির ক্ষেত্রে তা আলাদা হয়। বিপদে পড়লেই এই প্রাণী বয়সকে উল্টে দিয়ে আবার শৈশব পর্যায়ে ফিরে যায়। যেন এক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হঠাৎ আবার শিশু হয়ে গেল! এই প্রক্রিয়ার নাম 'লাইফ সার্কেল রিভার্সাল'। এই সময় জেলিফিশের শরীরে ঘটে যায় 'ট্রান্সডিফারেন্সিয়েশন' নামের এক আশ্চর্য সেলুলার পরিবর্তন। এতে বিশেষায়িত কোষ নিজের ধরণ বদলে অন্য ধরনের কোষে রূপ নেয় এবং শরীর আবার নবজীবন পায়।

আরও পড়ুনঃ মৃত্যুর পর কী ঘটে? আত্মা কীভাবে দেহত্যাগ করে? বাবা ভাঙ্গা বনাম বিজ্ঞান, কোন ব্যাখ্যা আসলে সত্যি, জানুন

যদিও বিজ্ঞানীদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। এই প্রাণীকে সম্পূর্ণ অমর ভাবা ভুল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের অংশ। প্রকৃতিতে শিকারি প্রাণীর আক্রমণ, রোগ কিংবা পরিবেশগত দুর্যোগে এদের মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে বয়সজনিত মৃত্যু থেকে এরা রক্ষা পায়, যা অন্য কোনও প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়। আর এই ক্ষমতাই বিজ্ঞানীদের কৌতূহল জাগিয়েছে। 

সহজ কথায় বলতে গেলে, সামুদ্রিক জগতে লুকিয়ে থাকা ক্ষুদ্র এই জেলিফিশই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যে বয়সকে উল্টে দিয়ে কার্যত ‘অমরত্বের’ অধিকারী হতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, টারিটোপসিস ডোরনি-র রহস্য উদঘাটন করলে হয়তো একদিন মানুষের বার্ধক্য ঠেকানো বা বয়স-সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। কোষ পুনরুজ্জীবনের এই রহস্য চিকিৎসা, জেনেটিক গবেষণা ও দীর্ঘায়ুর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন পথ দেখাচ্ছে।