প্রত্যেক জীবের মৃত্যু অনিবার্য। যার জন্ম হয়েছে, তার মৃত্যু হবেই। তবে মৃত্যু ঠিক কবে এবং কীভাবে আসবে, তা আমরা কেউ জানি না। যখন-যেভাবেই আসুক, মৃত্যু একদিন আসবেই। জন্ম এবং মৃত্যু এই দুই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যি আমরা কেউ পরিবর্তন করতে পারি না। কিন্তু মানবসভ্যতার এই চিরচেনা ধারণা আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই নাকি বদলে যেতে পারে। এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষ হয়তো বার্ধক্য থামিয়ে দেওয়া কিংবা পুরোপুরি উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে। অর্থাৎমৃত্যুর ওপরও আসতে পারে মানুষের নিয়ন্ত্রণ।

বিশ্বজুড়ে গবেষকরা এখন মানবদেহের কোষীয় প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। ডিএনএ মেরামত, টেলোমিয়ার বাড়ানো এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার পুনরুজ্জীবনের মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দেহকে ধীরে ধীরে বার্ধক্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করছে। পাশাপাশি জিন সম্পাদনার আধুনিক প্রযুক্তি সিআরআইএসপিআর ইতিমধ্যে  দেখাচ্ছে আশার আলো। এটি ভবিষ্যতে জিনগত ত্রুটি সংশোধন, ক্যানসার কোষ ধ্বংস এবং যৌবন ধরে রাখার জিন সক্রিয় করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উন্নতি যদি সফল হয় তবে রোগ নিরাময় আর মৃত্যুকে পরাস্ত করার সীমা একসময় মিশে যেতে পারে।

অন্যদিকে, বায়োপ্রিন্টিং ও স্টেম সেল থেরাপি বদলে দিচ্ছে মানবদেহের ধারণা। ভবিষ্যতে নিজের কোষ দিয়েই তৈরি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের জায়গা নিতে পারবে। অর্থাৎ, দেহ তখন এক অবিরাম নবীকরণের চক্রে টিকে থাকতে পারবে। সেই সঙ্গে নিউরোলিঙ্ক এবং হোল ব্রেইন ইমিউলেশন-এর মতোপ্রকল্পগুলো অনুসন্ধান করছে মানবচেতনা ডিজিটাল জগতে স্থানান্তরের সম্ভাবনা যেখানে  মন থাকবে, কিন্তু শরীর নয়। ফলে জীবনের সীমা হয়তো তখন শুধুই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করবে।

এদিকে, বিভিন্ন অ্যান্টি-এজিং যৌগ ও তরুণ দাতাদের রক্তরস ব্যবহারের পরীক্ষাও আশাব্যঞ্জক ফল দিচ্ছে। ইতিমধ্যে গুগল, অ্যামাজনসহ বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অমরত্বকে বাস্তব বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দিকেই এগোচ্ছে মানবসভ্যতা। ভবিষ্যতে মানুষ হয়তো নিজের আয়ু নির্ধারণ করতে পারবে। চাইলে বাঁচতে পারবে নিজের ইচ্ছা মতো। অর্থাৎ, মৃত্যুর দিন নির্ধারণ তখন মানুষ নিজের সিদ্ধান্তেই নির্ভর করবে।