মাঝেমধ্যেই অনেকেই খারাপ স্বপ্ন দেখে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। দুঃস্বপ্ন শুনলেই মনে আসে আতঙ্ক ও অস্বস্তির ছবি। দুঃস্বপ্নের কারণে আমাদের মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, আবার তা ভুলে যাওয়ারও চেষ্টা করি। কিন্তু এই খারাপ স্বপ্নের অভিজ্ঞতাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এমনকী এর পিছনে বড় বিপদ লুকিয়ে থাকতে পারে, সাম্প্রতি গবেষণা উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষকদের দাবি, দুঃস্বপ্ন কেবল মানসিক অস্থিরতার ফল নয়, অকালমৃত্যুরও পূর্বাভাস হতে পারে।
ঠিক কী বলছে গবেষণা নয়া গবেষণা? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখা মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক সংকেত হতে পারে। এটি ভবিষ্যতে স্নায়ুবিক রোগ, মানসিক অবসাদ, এমনকী জীবনকাল কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। বিশেষ করে মধ্যবয়সি ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার দুঃস্বপ্ন হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
দুঃস্বপ্নের পেছনের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ, অনিদ্রা, অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং ঘুমের অনিয়ম দুঃস্বপ্নের অন্যতম কারণ। এছাড়া কিছু ওষুধ ও শারীরিক সমস্যাও দুঃস্বপ্ন বাড়াতে পারে। ফলে এটি কেবল মানসিক সমস্যাই নয়, শারীরিক সুস্থতার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে দুঃস্বপ্ন।আসলে শরীরের উপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি করে দুঃস্বপ্ন। মস্তিষ্ক যেহেতু স্বপ্ন ও বাস্তবের পার্থক্য বুঝতে পারে না, তাই দুঃস্বপ্নের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শরীরে ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট’ পরিস্থিতি তৈরি করে। এর জেরে ঘাম দেওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়।আর এই প্রক্রিয়া চলাকালীন শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। যা বয়স বাড়ানোর প্রক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখা ব্যক্তিদের টেলোমেয়ার যাকে ক্রোমোজোমের সুরক্ষাকবচ বলা হয়, তার দৈর্ঘ্য দ্রুত কমে আসে। এটিও দ্রুত বার্ধক্যের অন্যতম জৈবিক লক্ষণ। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই মানসিক চাপ এবং ঘুমের ব্যাঘাতই অকাল বার্ধক্য ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে মাসে এক বার দুঃস্বপ্ন দেখাও বিপজ্জনক হতে পারে বলে গবেষকদের দাবি।

জনস্বাস্থ্য চিকিৎসকদের মতে, দুঃস্বপ্নকে তুচ্ছ বিষয় ভেবে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি শরীর ও মনের গভীর কোনও অসুস্থতার সংকেত হতে পারে। ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখা মানে ঘুমের মান নষ্ট হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
দুঃস্বপ্নকে শুধুমাত্র ভয়ঙ্কর বা অস্বস্তিকর স্বপ্ন ভেবে অবহেলা করলে চলবে না। এটি অনেক সময় শরীর ও মনের জন্য বড় বিপদের পূর্বাভাস হতে পারে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলেই দুঃস্বপ্নের সমস্যা অনেকটা কমানো সম্ভব। যেমন— প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠার অভ্যাস তৈরি করা, মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলা, প্রয়োজন হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্নায়ুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। নিয়মিত দুঃস্বপ্ন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
