আজকাল ওয়েবডেস্ক: আড্ডার ছলে হোক বা দাম্পত্যের খুনসুটি, পুরুষ না নারী, কার ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা বেশি, এই নিয়ে তর্কের শেষ নেই। পুরুষেরা প্রায়শই নিজেদের ‘শক্তিমান’ প্রমাণে ব্যস্ত থাকেন, অন্যদিকে নারীদের ‘দুর্বল’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও নতুন নয়। কিন্তু বিজ্ঞান ও গবেষণা কী বলছে? শারীরিক কষ্টের তীব্র অনুভূতি কার বেশি হয়? উত্তরটা জানলে অনেক পুরুষই হয়তো অবাক হবেন।
একাধিক গবেষণা বলছে, নারীরাই শারীরিক ব্যথা বেশি অনুভব করেন। শুনতে অবাক লাগলেও এর পিছনে রয়েছে জটিল জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণ।

বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে ব্যথা অনুভবের প্রক্রিয়াটি। শরীরের কোথাও আঘাত লাগলে স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে সঙ্কেত পৌঁছয়। মস্তিষ্ক সেই সঙ্কেত বিশ্লেষণ করে ব্যথার অনুভূতি তৈরি করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পুরো প্রক্রিয়াটিতেই নারী ও পুরুষের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।

হরমোনের খেলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পার্থক্যের অন্যতম প্রধান কারণ হল হরমোন। পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ব্যথার অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টেস্টোস্টেরন ব্যথা উপশমে সাহায্য করে, অর্থাৎ এটি প্রাকৃতিক পেইনকিলারের মতো কাজ করে। অন্যদিকে, ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ব্যথার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষত, ঋতুচক্রের বিভিন্ন সময়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রার তারতম্যের কারণে নারীদের ব্যথার অনুভূতিতেও পরিবর্তন আসে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

মস্তিষ্কের গঠন
নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতাতেও সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। ‘ব্রেন ইমেজিং’ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্যথার সঙ্কেত মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে ভিন্নভাবে উত্তেজিত করে। নারীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের যে অংশটি আবেগের সঙ্গে জড়িত, সেটি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে, তাঁরা ব্যথার সঙ্গে কষ্টও বেশি অনুভব করেন

ক্রনিক ব্যথার প্রকোপ
পরিসংখ্যান বলছে, মাইগ্রেন, ফাইব্রোমায়ালজিয়া (সারা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা), রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগগুলিতে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হন। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে ক্রনিক ব্যথায় ভোগার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ। এর পিছনেও হরমোন এবং জেনেটিক কারণকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

সামাজিক প্রভাব
ব্যথা অনুভবের ক্ষেত্রে সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও উপেক্ষা করার নয়। ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের শেখানো হয় ‘ছেলেরা কাঁদে না’ বা ছেলেদের ব্যথা সহ্য করতে হয়। ফলে অনেক পুরুষই নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন। তুলনায়, নারীদের আবেগ বা কষ্ট প্রকাশে সামাজিক বাধা কম। এই সামাজিক শর্তগুলিও ব্যথা নিয়ে নারী-পুরুষের ভিন্ন অভিব্যক্তির একটি কারণ হতে পারে। কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুযায়ী, পুরুষরা ব্যথার অভিজ্ঞতা মহিলাদের চেয়ে বেশিদিন মনে রাখেন এবং সেই পরিস্থিতিতে পুনরায় পড়তে চান না। তুলনায় মহিলারা সেই কষ্ট দ্রুত ভুলে যেতে পারেন।
তবে এর অর্থ এই নয় যে পুরুষরা ব্যথা অনুভব করেন না বা নারীরা সামান্য আঘাতেই কাতর হয়ে পড়েন। ব্যথার অনুভূতি অত্যন্ত ব্যক্তিগত একটি বিষয়। কিন্তু সার্বিক চিত্রটা দেখলে, জৈবিক এবং স্নায়ুগত কারণেই নারীদের ব্যথা অনুভবের তীব্রতা পুরুষদের চেয়ে বেশি। সুতরাং, পরের বার সঙ্গিনীকে সামান্য কষ্টে কাতর হতে দেখলে তাঁকে ‘দুর্বল’ ভাবার আগে বিজ্ঞানের এই ব্যাখ্যাটি মনে রাখাই বিচক্ষণতার পরিচয় হবে।