আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম কি কাঁটাতারের বেড়া মানে? বা সাত সমুদ্র তেরো নদীর বাধা? হালফিলের ডিজিটাল যুগে উত্তরটা হয়তো ‘না’। কিন্তু প্রেম যখন প্রাচীন সংস্কৃতির প্রাচীরে ধাক্কা খায়, তখন? তখন পাঁচ হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়। সম্প্রতি এমনই এক অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনির সাক্ষী থাকল নেটদুনিয়া, যার এক প্রান্তে এক ভারতীয় ভ্লগার এবং অন্য প্রান্তে ইন্দোনেশিয়ার এক তরুণী।

 

ঘটনার সূত্রপাত মাস কয়েক আগে, অন্তর্জালের দুনিয়ায়। যেমনটা হয়ে থাকে, আলাপ থেকে বন্ধুত্ব, আর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। ভারতীয় ওই ভ্লগারের মনে হয়েছিল, ইন্দোনেশীয় তরুণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিছকই অনলাইন বন্ধুত্ব নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। নিয়মিত কথোপকথনে মনের তার বাঁধা পড়েছিল তাঁর। সেই বিশ্বাস থেকেই এক দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। আকাশপথে ৫০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সটান হাজির হন প্রেমিকার দেশে, ইন্দোনেশিয়ায়। উদ্দেশ্য একটাই- আংটি বাড়িয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া।

 

ইন্দোনেশিয়ায় পা রাখার পর উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়েছিলেন তিনি। আর দেরি করেননি। পকেট থেকে আংটি বের করে সটান হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন প্রেমিকার সামনে। প্রশ্ন করেন, “তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?” কিন্তু এরপর যা ঘটল, তার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। তরুণীটি প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। ভাষাগত ব্যবধান থাকায় পরিস্থিতি বুঝতে তাঁর খানিকটা সময় লাগে। শেষে একটি অনুবাদক অ্যাপের সাহায্যে ভারতীয় যুবকের আর্তি বুঝতে পারেন তিনি।

এরপরই সেই মুহূর্ত, যা এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সবটা বোঝার পর তরুণীটি অত্যন্ত বিনীতভাবে, কিন্তু স্পষ্ট উচ্চারণে বলেন, “না।”

তবে এই প্রত্যাখ্যানের নেপথ্যে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বা অপছন্দ ছিল না। ছিল এক কঠোর সামাজিক প্রথা, যা ভাঙা প্রায় অসম্ভব। জানা গিয়েছে, রুমস্যাহ নামের ওই তরুণী ইন্দোনেশিয়ার বাদুই জনজাতির সদস্য। এই জনজাতির মানুষেরা নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে অত্যন্ত কঠোর। বাইরের জগতের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে তাঁদের আপত্তি না থাকলেও, জীবনসঙ্গী হিসেবে তাঁরা নিজেদের সম্প্রদায়কেই বেছে নেন। এই নিয়ম প্রায় অলঙ্ঘনীয়।

ওই ভারতীয় ভ্লগার জানিয়েছেন, রুমস্যাহ তাঁকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। বাদুই জনজাতির মেয়েরা নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করেন না বললেই চলে। রুমস্যাহ নিজেও ইন্দোনেশিয়ায় একজন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। কিন্তু জনপ্রিয়তার আলোয় থাকলেও নিজের সংস্কৃতির শিকড়কে তিনি ভোলেননি।

ফলে, একরাশ আশা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি দেওয়া ভারতীয় যুবককে ফিরতে হল ভগ্ন হৃদয়ে। তাঁর এই কাহিনি যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিশ্বায়নের যুগে ডিজিটাল প্রেম যত সহজেই সীমান্ত পেরোতে পারে, সংস্কৃতির অদৃশ্য দেওয়াল পেরোনো ততটা সহজ নয়। তাই পরস্পরকে পছন্দ হলেও অসমাপ্তই থেকে গেল দুই দেশের দুই তরুণ তরুণীর প্রেমের কাহিনি।