আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেমিকার সঙ্গে ঘর বাঁধতে চান স্ত্রী। কিন্তু স্বামী বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এমন ঘটনা আকছার ঘটে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় দেখা গেল একেবারে উল্টো ছবি।

ইন্দোনেশিয়ার একটি ভিডিও সম্প্রতি নেটমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রচলিত ধারণার ঠিক উল্টো ছবি। সেখানে কোনও বিবাদ, চোখের জল বা তিক্ততা নেই। বরং সমাজের পাঁচ জনকে সাক্ষী রেখে, এক অদ্ভূত প্রথাগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বামী নিজেই তাঁর স্ত্রীকে তুলে দিচ্ছেন প্রেমিকের হাতে। শান্ত, অবিচল মুখে তিনি নতুন যুগলকে জানাচ্ছেন শুভেচ্ছাও। এই আশ্চর্য ঘটনা এবং তার নেপথ্যে থাকা এক প্রাচীন প্রথাকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
আরও পড়ুন: পুরুষরা অন্তর্বাস কিনছেন? না একটিই দিনের পর দিন পরছেন? সেটাই বলে দিতে পারে অর্থনীতির অবস্থা! কীভাবে?

ইন্দোনেশিয়ার টোলাকি জনজাতির মধ্যে এই প্রথা ‘মোউইয়া সারাপু’ বা ‘মোসেহে’ নামে পরিচিত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ‘মোউইয়া সারাপু’-র আক্ষরিক অর্থ হল ‘হস্তান্তর করে মুক্তি দেওয়া’। পরকীয়ার কারণে দাম্পত্যে ভাঙন দেখা দিলে, উভয় পক্ষের সম্মতিতে শান্তিপূর্ণভাবে সেই বিবাদের নিষ্পত্তির জন্যই এই প্রথার আয়োজন করা হয়। এটি নিছক পারিবারিক বিষয় নয়, বরং এক সামাজিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন দুই পরিবারের সদস্য, সামাজিক প্রধান বা গোষ্ঠীর মোড়ল এবং বিবাদে জড়িত দম্পতি। সকলে একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমা চান, দায়িত্ব হস্তান্তর করেন এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট রীতি পালন করে বিবাদের অবসান ঘটান। স্বামীর কাছে এই প্রথা সম্মান রক্ষার এক উপায়, যেখানে বিবাদ বা হিংসার পরিবর্তে মর্যাদার সঙ্গে পরিস্থিতির সমাধান করা হয়।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ঘটনাটি ঘটে গত ২০ সেপ্টেম্বর, ইন্দোনেশিয়ার কোনাওয়ে রিজেন্সির পুউদোমবি গ্রামে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্বামী অত্যন্ত শান্ত এবং সংযত হয়ে গোটা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। সামাজিক প্রধান এবং দুই পরিবারের সামনে তিনি মাথা উঁচু রেখেই ঐতিহ্যবাহী এই প্রথাকে সম্মান জানিয়েছেন। স্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়নি, বরং শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মিটিয়ে তিনি নিজের সম্মান রক্ষা করেছেন বলেই মনে করছেন অনেকে।
‘মোউইয়া সারাপু’ প্রথা অনুযায়ী, স্ত্রীর প্রেমিককে কিছু পূর্বনির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়, যা একপ্রকার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই দেখা হয়। এই ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্বামীর থেকে স্ত্রীকে নিজের কাছে নেওয়ার আগে প্রেমিকের ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি মহিষ দেওয়ার কথা ছিল। তবে তার বদলে একটি গরু এবং নগদ ৫০ লক্ষ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৬ হাজার টাকা) দিতে হয়েছে তাঁকে। এই শর্ত পূরণ হওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীকে তাঁর প্রেমিকের হাতে তুলে দেন স্বামী।

তবে অনুষ্ঠানের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী মুহূর্ত ছিল স্বামীর শেষ কথাগুলি। স্ত্রীকে তাঁর প্রেমিকের হাতে তুলে দিয়ে তিনি বলেন, “আমি ওকে তোমার হাতে তুলে দিলাম, আমি ডিভোর্স দিয়েছি। কিন্তু আমার অনুরোধ তুমি ওর যত্ন নিয়ো। ওকে কখনও আঘাত কোরো না। এতদিন ও আমার সঙ্গে সুখী ছিল না।” স্বামীর এই মন্তব্যের পরেই শেষ হয় অনুষ্ঠান। ভিডিও ভাইরাল হতেই বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে সমাজমাধ্যমে। সম্মানজনক বিচ্ছেদ কেমন হওয়া উচিত, কিংবা এই অদ্ভুত সামাজিক প্রথা কতটা প্রাসঙ্গিক, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজারো প্রশ্ন।