ভিটামিন বি১২ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের স্নায়ু, মস্তিষ্ক এবং রক্ত তৈরির জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে এর ঘাটতি খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের মধ্যে ভিটামিন বি১২–এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়, কারণ এই ভিটামিন প্রধানত আমিষ খাবারে পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি হজমের সমস্যা, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পরিবর্তন, অ্যালকোহল সেবন বা দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টাসিড ওষুধ খাওয়ার ফলেও এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় মানুষ ক্লান্তি, দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা–কে স্বাভাবিক ভেবে নেন, কিন্তু এগুলো শরীরে ভিটামিন বি১২ ঘাটতির সংকেত হতে পারে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন বি১২–এর অভাব হলে শরীরে নিয়মিত ক্লান্তি, হাত–পায়ে ঝিনঝিন ভাব, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মনোযোগে ঘাটতি, জিভে জ্বালাভাব, চুল পড়ে যাওয়া এবং ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে বি১২–এর ঘাটতি ডিপ্রেশন বা মুড সুইংসেরও কারণ হতে পারে।

যদি সময়মতো এই উপসর্গগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া না হয়, তবে তা স্নায়বিক সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা করানো জরুরি। দীর্ঘ সময় ধরে ভিটামিন বি১২–এর ঘাটতি শরীরে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শরীরে ভিটামিন বি১২–এর ঘাটতি থাকে, তবে তা খাদ্যাভ্যাস এবং সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে মাত্র সাত দিনের মধ্যেই অনেকটা উন্নতি করা সম্ভব। প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত। এগুলো ট্যাবলেট বা জিভের নিচে গলে যাওয়া ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক সরাসরি ইনজেকশনও দিয়ে থাকেন, যা দ্রুত কার্যকর হয়।

একই সঙ্গে ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করা জরুরি। যেমন, ডিম, দুধ, দই, চিজ, পনির এবং ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল। নিয়মিত এগুলো খেলে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে শুরু করবে।

ভিটামিন বি১২ মূলত আমিষ খাবারে বেশি পাওয়া যায়। তাই আপনার ডায়েটে দুধ, দই, পনির, ডিম, চিকেন, মাছ এবং অরগ্যান মিট (যেমন লিভার) যোগ করতে পারেন। আর যদি আপনি নিরামিষভোজী হন, তাহলে ফোর্টিফায়েড খাবারের দিকে নজর দেওয়া জরুরি—যেমন বি১২ সমৃদ্ধ ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, টোফু, সয়া মিল্ক এবং প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্টস।
খাবার অবশ্যই সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে, যাতে শরীর সহজে ভিটামিন বি১২ শোষণ করতে পারে। এর পাশাপাশি প্রচুর জল পান করাও জরুরি, কারণ এটি শরীর থেকে টক্সিন বার করতে সাহায্য করে। যদি অবস্থার অবনতি হয় বা উপসর্গ বাড়তে থাকে, তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত।