আজকাল ওয়েবডেস্ক: চুমু শুধু ভালোবাসার প্রকাশ নয়, বরং এটি আমাদের শরীর ও মনে গভীর প্রভাব ফেলে—এমনটাই বলছেন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি ধারণা বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছে—একটি আদর্শ চুমুর সময়কাল অন্তত ছয় সেকেন্ড হওয়া উচিত। এই তত্ত্বটি প্রথম প্রচার করেন বিশ্বখ্যাত সম্পর্ক বিশারদ ড. জন গটম্যান (Dr. John Gottman)। তাঁর গবেষণা অনুসারে, ছয় সেকেন্ডের একটি সচেতন, মনোযোগী চুমু শরীরে অক্সিটোসিন (Oxytocin) নামের হরমোন নিঃসরণ করে, যা প্রেম, আস্থা ও ঘনিষ্ঠতার অনুভূতি তৈরি করে।

এই দাবিটি যাচাই করতে ভারতীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. নেহা পরাশর (Dr. Neha Parashar)**-এর সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। তিনি নিশ্চিতভাবে বলেন, “হ্যাঁ, ছয় সেকেন্ডের একটি অর্থপূর্ণ চুমু সত্যিই অক্সিটোসিন নিঃসরণ ঘটাতে পারে।”

ড. পরাশরের ভাষায়, “অক্সিটোসিন এমন একটি নিউরোকেমিক্যাল যা সামাজিক বন্ধন, আস্থা ও অন্তরঙ্গতার মূল চালিকা শক্তি। যখন আপনি অন্তত ছয় সেকেন্ডের জন্য মনোযোগ দিয়ে চুমু খান, তখন মস্তিষ্কে আনন্দদায়ক রাসায়নিকগুলির একটি মিশ্রণ সক্রিয় হয়, যা আপনাদের মধ্যে গভীর স্নেহ ও নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে।”

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, ছয় সেকেন্ডের চুমু আসলে দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে একটি সচেতন বিরতি। “একটি তাড়াহুড়ো করা বা মনোযোগহীন চুমু মস্তিষ্ককে যথেষ্ট সময় দেয় না এসব রাসায়নিক নিঃসরণের জন্য। ফলে সম্পর্কের মধ্যে সেই উষ্ণতা বা সংযোগ তৈরি হয় না।”

আরও পড়ুন: শরীরকে অকেজো করে দেয়! আর্থ্রাইটিস থেকে বাঁচতে কী করবেন, কাদের হওয়ারই বা ভয় বেশি

ড. পরাশর বলেন, “অক্সিটোসিন শুধু রোমান্টিক সম্পর্কেই নয়, সন্তান জন্মদান, স্তন্যপান বা আলিঙ্গনের সময়ও নিঃসৃত হয়—যা মানুষে মানুষে বন্ধনকে মজবুত করে।” তাই তাঁর মতে, ছয় সেকেন্ডের চুমু কেবল শারীরিক সংস্পর্শ নয়, এটি এক ধরনের মানসিক যোগাযোগ—একটি উপায় যার মাধ্যমে ভালোবাসা, যত্ন ও প্রতিশ্রুতি অনুভূত হয় জৈবিকভাবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা একমত যে, চুমুর সময়কাল গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটিই একমাত্র বিষয় নয়। ড. পরাশর বলেন, “ছয় সেকেন্ডের চুমু একটি ছোট অথচ শক্তিশালী উপায় সম্পর্ককে গভীর করতে। তবে গুণগত দিকটাই আসল।”

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত চুমু খায়, তাদের মধ্যে সম্পর্কের সন্তুষ্টি ও সুখের মাত্রা বেশি। ড. পরাশর বলেন, “চুমু আসলে সম্পর্কের একটি বারোমিটার বা মাপকাঠি হিসেবে কাজ করতে পারে। যখন চুমুর সংখ্যা বা উষ্ণতা কমে যায়, সেটা প্রায়ই আবেগগত দূরত্বের ইঙ্গিত দেয়। আবার সচেতনভাবে দীর্ঘ ও আবেগপূর্ণ চুমু বিনিময় করলে সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”

তবে তিনি সতর্ক করে দেন—ছয় সেকেন্ডের সময় মাপতে গিয়ে যেন সম্পর্কের স্বাভাবিকতা নষ্ট না হয়। “চুমুর সময় গোনা শুরু করলে সেটা চাপ বা উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। চুমু কখনোই পরিকল্পিত অভিনয় হওয়া উচিত নয়; এটি হওয়া উচিত স্বতঃস্ফূর্ত ও আবেগপূর্ণ।”

তাঁর পরামর্শ, “চুমুর সময়ে নিজেকে পুরোপুরি উপস্থিত রাখুন, মুহূর্তটা অনুভব করুন। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন কীভাবে দুজনেই আরাম বোধ করেন। সম্পর্কের মজবুতি আসে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আন্তরিকতা থেকে, নির্দিষ্ট সেকেন্ড থেকে নয়।”

শেষ পর্যন্ত, ড. পরাশর বলেন, “ছয় সেকেন্ডের চুমু একটি সুন্দর প্রতীক—যে আমরা একে অপরের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছি, সময় নিচ্ছি, ভালোবাসা প্রকাশ করছি। কিন্তু আসল বিষয় হলো অনুভব করা, গণনা নয়।” অর্থাৎ, চুমুর দৈর্ঘ্য যতই হোক, ভালোবাসার গভীরতা নির্ভর করে হৃদয়ের সংযোগের ওপর—ঘড়ির কাঁটার ওপর নয়।