আজকাল ওয়েবডেস্ক: দাম্পত্য কলহে একে অপরকে ডাক নাম ধরে ডাকা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই মন্তব্য যদি শালীনতার মাত্রা ছাড়ায়, তবে তা বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি এমনই এক মামলায় যুগান্তকারী রায় দিল ছত্তীসগঢ় হাইকোর্ট। বাবা-মায়ের কথা মতো চলায় স্বামীকে ‘পোষা ইঁদুর’ (পালতু চুহা) বলে সম্বোধন করাকে ‘চরম মানসিক নির্যাতন’ হিসাবে চিহ্নিত করে এক মহিলার বিবাহবিচ্ছেদের পক্ষেই রায় দিয়েছে আদালত।
চলতি মাসের ৩ তারিখে ছত্তীসগঢ় হাইকোর্টের বিচারপতি রজনী দুবে এবং বিচারপতি অমিতে্দ্র কিশোর প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে এক পারিবারিক আদালত স্বামীর প্রতি স্ত্রীর মানসিক নির্যাতন এবং গৃহত্যাগের কারণে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করেছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন স্ত্রী। কিন্তু সমস্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, স্বামী আদালতে অভিযোগ করেন যে, তাঁর স্ত্রী বিয়ের পর থেকেই তাঁকে বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি যৌথ পরিবারে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না এবং প্রায়শই বাড়ির বয়স্কদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। স্বামী যখন বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা থাকতে অস্বীকার করেন, তখন স্ত্রী তাঁর উপর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে ‘বাবা-মায়ের পোষা ইঁদুর’ বলে অপমান করেন। স্বামী আদালতে প্রমাণ হিসেবে স্ত্রীর পাঠানো মেসেজ এবং পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য পেশ করেন। একটি মেসেজে স্ত্রী পরিষ্কার লিখেছিলেন, “তুমি তোমার বাবা-মাকে ছেড়ে আমার সঙ্গে এসে থাকো।”
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
শুধু তাই নয়, স্বামী আরও অভিযোগ করেন যে, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী নিজের ক্ষতি করারও চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদিকে, ২০১১ সালে একবার অল্প কিছুদিনের জন্য শ্বশুরবাড়ি ফিরে আসা ছাড়া বাকি সময়টা স্ত্রী বাপের বাড়িতেই থাকতেন, যা আইনত ‘পরিত্যাগ’ (Desertion) হিসাবেই গণ্য হয়।
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে জানায়, ভারতীয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোনও সঙ্গীকে তাঁর বাবা-মাকে ছেড়ে আসার জন্য জোর করা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। আদালত আরও বলে, স্বামীকে ‘পোষা ইঁদুর’-এর মতো অপমানজনক নামে ডাকা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করার সামিল, যা নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পড়ে। স্ত্রী নিজের দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য যে আবেদন জানিয়েছিলেন, আদালত তা খারিজ করে দেয়। বেঞ্চের মতে, আবেদনকারী মহিলার নিজের আচরণই তাঁর আবেদনকে দুর্বল করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
তবে বিবাহবিচ্ছেদের রায় বহাল রাখলেও স্ত্রীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আদালত স্বামীকে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা স্থায়ী খোরপোশ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই রায় দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতনের সংজ্ঞাটিকে আরও স্পষ্ট করল বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। মুখের কথা বা সামান্য ব্যঙ্গ-বিদ্রূপও যে গভীর মানসিক ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে, এই রায় সেই দিকেই আঙুল তুলল।
